এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৪১৩ জনের

এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৪১৩ জনের

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন। আহতের সংখ্যা ৫৩২ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৬৭ জন নারী ও ৫৮ জন শিশু রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছে।

আজ শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটির তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, নভেম্বরে এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১৫৮ টি মোটরসাইকেলের। এতে নিহত হয়েছেন ১৮৪ জন, যা মোট নিহতের ৪৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ৯৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৩ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ সময় সাতটি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন।

সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে মাসিক দুর্ঘটনার এ প্রতিবেদনে তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮৪ জন, বাসযাত্রী ২৩ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি যাত্রী ১২ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ৯ জন (২ দশমিক ১৭ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) ৬৬ জন (১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-বোরাক-মাহেন্দ্র-টমটম) ১৭ জন এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ৬ জন।

সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩১টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি গ্রামীণ সড়কে, শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯১টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৫৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

এতে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৪ জন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।

সংস্থাটি বলছে-ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতাসহ ১০ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা কমছে না।

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহর ৫ শতাংশ ঘটেছে ভোরে, সকালে ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, দুপুরে ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, বিকালে ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং রাতে ২১ দশকি ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ঊর্ধমুখী হলেও এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।

এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নটরডেম কলেজের ২ জনসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর আগে গত অক্টোবর মাসে ৩৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়েছিলেন।