যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা

র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং এই বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ব্যবসায়ীরা চিন্তিত বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বজায় রাখা যায়, সে ব্যাপারে তারা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজার কিছুতেই হারাতে চান না তারা। সম্পর্ক উন্নয়নে দেশটির ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে বিজিএমইএ।

বুধবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত 'ইআরএফ সংলাপে' এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি। র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং এই বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশটির রপ্তানিতে কোনো প্রভাব ফেলছে কিনা- সংলাপে গণমাধ্যমকর্মীদের এ প্রশ্নের জবাবে ফারুক আরও বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার কারণে এখনও দেশটিতে রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়নি। তবে সব রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থে এ ব্যাপারে সহযোগিতা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি, যাতে ব্যবসা নির্বিঘ্নে চলতে পারে।

রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে সংগঠনের নিয়মিত কর্মসূচি হিসেবে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপ পরিচালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সহসভাপতি ও বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলমসহ সংগঠনের সিনিয়র সদস্যরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার। মোট পোশাক রপ্তানির ২০ শতাংশই যায় দেশটিতে। এর পরিমাণ বছরে ৬০০ কোটি ডলারের মতো। চলতি অর্থবছর দেশটিতে আরও অনেক বেশি পরিমাণে রপ্তানি বাড়ছে। অর্থবছরের গত ছয় মাস ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৪২৩ কোটি ডলারেরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ফেরত পাওয়া-সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর সব ধরনের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। এখন জিএসপি ফেরত দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে রাজনৈতিক কারণে এখনও এ সুবিধা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর মানসম্মত কর্মপরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও পোশাক পণ্য কখনোই এ সুবিধার আওতায় ছিল না।

সংলাপে বিজিএমইএ সভাপতি উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা, ব্র্যান্ড ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পোশাক খাত এবং দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ সমুন্নত রাখার বিষয়ে সংগঠনের বিভিন্ন তৎপরতার কথা তুলে ধরেন। আলোচনায় পোশাক খাতের সংস্কার উন্নয়ন, পরিবেশসম্মত উৎপাদন ও মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও উঠে আসে।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পোশাক খাতের পরিণতি সম্পর্কে বিজিএমইএর উদ্বেগের কথা জানান ফারুক হাসান। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক চুক্তি (পিটিএ) করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে উৎস বিধির কঠিন শর্ত পরিপালন করতে হবে। বাড়াতে হবে নিজস্ব কাঁচামালের ব্যবহার। এতে কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে যে কোনো দেশের কাঁচামালে উৎপাদিত পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

রপ্তানিতে ওমিক্রনের প্রভাব সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এখনও কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে কারখানা পর্যায়ে ওমিক্রন সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য সদস্য কারখানাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কঠোর বাস্তবায়নে কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ৪৯১ কোটি ডলার রপ্তানি আয় এসেছে গত ডিসেম্বরে। এত বড় উল্লম্ম্ফনের কারণ ব্যাখায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় রপ্তানি আদেশ বাতিল, বিলম্বে মূল্যপরিশোধ ও চুক্তির তুলনায় কম মূল্য মেনে নিয়েছেন উদ্যেক্তারা। এভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে সুম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সে সম্পর্কের সুফল হিসেবে রপ্তানি বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। ওমিক্রন বড় ধরনের কোন ঝুকি তৈরি না করলে আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে আশা করেন বিজিএমইএ সভাপতি।