ফের বাসভাড়া বাড়ানোর পায়তারা!

ফের বাসভাড়া বাড়ানোর পায়তারা!

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার থেকে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে৷

বাস-মিনিবাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে৷ ট্রেনে এই নীতি কার্যকর হচ্ছে বুধবার থেকেই৷

তবে আশঙ্কার কথা হলো বাস মালিকরা বলেছেন, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হলে ভাড়াও বাড়াতে হবে৷ তারা মনে করছেন এখন যে ভাড়া তার চেয়ে কমপক্ষে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ ভাড়া বাড়াতে হবে৷

আর এটা নিয়ে যাত্রী সাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে৷ তাদের মতে, গত নভেম্বর মাসেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে গড়ে ২৮ শতাংশ বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে৷ কিন্তু তেলের দাম বেড়েছিলো লিটারে ১৫ টাকা৷ আর এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমানোর পরও এখানে তেলের দাম কমানো হচেছ না৷ সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে৷

এই বাসভাড়া নিয়ে এখনো কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি৷ আগামীকাল (বুধবার) এ নিয়ে বিআরটিএ একটি বৈঠক ডেকেছে৷ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন,‘‘সরকার বাসভাড়া নিয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে আমরা আগের যে প্রজ্ঞাপন ছিলো সেটাই অনুসরণ করবো। সেখানে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে বাস ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছিল। আর যদি সরকার কোনো নির্দেশনা নতুন করে দেয় তাহলে আমরা সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব৷

‘‘অর্ধেক যাত্রী নিতে হলে বাস ভাড়া যৌক্তিকভাবে বাড়াতেই হবে৷ তা না হলে মালিকেরা গাড়ি চালাবেন কী না জানি না। কারণ ভাড়া না বাড়ালে তেল খরচই উঠবে না। ড্রাইভার হেলপারদের বেতন দেব কীভাবে?''

গত নভেম্বরে বাস ভাড়া তো একবার বাড়ানো হয়েছে, এখন আবার কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তখন তো জ্বালানি তেলের সাথে বাস ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। আমাদের তো কোনো বাড়তি লাভ হয়নি। এখন অর্ধেক যাত্রী বহনে আমাদের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দিতে হবে৷''

গত নভেম্বরে পরিবহণ মালিকেরা ধর্মঘটের নামে রীতিমত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বাস ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। এবারও তারা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এর আগে করোনার সময় বাস ভাড়া শতকরা ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছিলো।

গত নভেম্বরের বর্ধিত ভাড়ার ওপর যদি আরো ৬০ ভাগ বাড়ানো হয় তাহলে গত আড়াই মাসে বাস ভাড়া প্রায় শতভাগ বেড়ে যাবে। নভেম্বরের আগে ঢাকায় মিনিমাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ছিলো এক টাকা ৭০ পয়সা। নভেম্বরে তা বেড়ে হয় দুই টাকা ১৫ পয়সা। আর এখন হবে তিন টাকা ৪৪ পয়সা।

অন্যান্য ছোট যানবাহন এবং লঞ্চেও একই হারে বাড়বে। সরকার পরিচালিত বলে ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,"সরকারের এখানে দায়িত্ব আছে। যদি বাস ভাড়া বাড়ানোর যুক্তিও থাকে তাহলে সরকারের উচিত তাদের অন্য কোনোভাবে সুবিধা বা ভর্তুকি দেয়া, যাতে তারা বাস ভাড়া না বাড়ায়। তাদের ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া যায়। ভারতসহ আরো অনেক দেশে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চললেও বাসভাড়া বাড়েনি। শুধু আমাদের দেশে যাত্রীদের বলির পাঠা করা হয়।

"বাস্তবে বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া এখনই নেয়া হচ্ছে। সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতকরা ১০০ থেকে ১৫০ ভাগ বেশি। আর বাসগুলোর ভাড়া নির্ধারণের সময় সিটের যে সংখ্যা দেখানো হয় তার চেয়ে সিট কমপক্ষে ৩০ ভাগ বেশি থাকে। ফলে অর্ধেক যাত্রী নিলেও তাতের লোকসান হওয়ার কথা নয়। তারা অতি লাভের লোভে মানুষের খারাপ সময়েও ভাড়া বাড়াতে চায়।” তার মতে, বাসভাড়া বাড়িয়েও বাস্তবে দেখা যাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাস বোঝাই করেই যাত্রী নেয়া হবে। আগে এরকমই হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন জানান,"পরিবহণ মালিকেরা নানা কৌশলে বাসের ভাড়া বাড়ায়। একটি অজুহাত পেলেই হলো। ৫০ ভাগ যাত্রী নিলেও এখন বাসের ভাড়া বাড়ানোর দরকার নাই। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষ ও সরকারকে জিম্মি করে তারা এটা করছে।”

তিনি তার কথার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন,"একটি গাড়ি নিবন্ধনের সময় শতকরা ১১ ভাগ সিট খালি দেখানো হয়। আর তার ভিত্তিতেই ভাড়া ঠিক হয়। এর মানে হলো ওই ১১ জন যাত্রীর ভাড়া অন্য যাত্রীদের ওপর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো সিট তো খালি থাকে না। সিটি সার্ভিসে সিটের চেয়ে দুই গুণ বেশি যাত্রী নেয়া হয়। তারা সারা বছরই একই খরচে দুই গুণ বেশি ব্যবসা করেন।”

তিনি আরো একটি কৌশলের কথা বলেন। আর তা হলো একটি মিনিবাসের দাম দেখানো ২৯-৩০ লাখ টাকা। ফলে ভাড়া নির্ধারণও করা হয় বেশি। কিন্তু সিটি সার্ভিসের এসব মিনিবাসের দাম ৮-১০ লাখ টাকার বেশি না।

এদিকে পরিবহণ শ্রমিকদের টিকার সার্টিফিকেট দেখিয়ে কাজ করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। হানিফ খোকন বলেন,"এটা অযৌক্তিক। সবাইকে কি টিকা দেয়া হয়েছে? আর দুই-এক দিনে কি ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিককে টিকা দেয়া সম্ভব?”

খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহও এই নিয়মের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন,"করোনায় সব কিছু খোলা থাকবে। শুধু বাসে অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে। আমার মনে হয় মাস্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে সব সিটে যাত্রী নেয়ার বিধান থাকলে ভাড়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠত না।”

ভাড়া নিয়ে বিআরটিএর দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তারা বুধবারের বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষার পরামর্শ দেন।