দুই সপ্তাহে ২০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, কিন্তু কেন?

দুই সপ্তাহে ২০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, কিন্তু কেন?

দেশে গত দুই সপ্তাহে আত্মহত্যা করেছেন কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে ফেরা কেউ কেউ বলছেন, জীবনে ব্যর্থতাই এর প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহনন প্রতিরোধে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার পাশাপাশি প্রয়োজন পারিবারিক বন্ধন।

আত্মহত্যা ভয়ঙ্কর এক সমাজিক ব্যধি, যা নিমিষেই শেষ করে দেয় একটি পরিবারের স্বপ্ন-আশা। সম্প্রতি রাজধানীর জাপান গার্ডেনের ১৬তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এক তরুণীর মৃত্যু যেমন রয়েছে, তেমনি বিসিএস চাকরি পাওয়া তরুণও রয়েছে এ তালিকায়। কিন্তু কেন জীবন শেষ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মানুষ হতাশ কখন হয়, যখন সে তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। সেটা তার যে কোনো বয়সেই হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, লোকজন বলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটা করতে পারল না, ওটা করতে পারল না। এটা একট বড় ধরনের মানসিক চাপ। এ ধরনের আরও অনেক সমস্যায় পড়েই মানুষ আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। তবে প্রতিটি ধর্মেই লেখা আছে যে আত্মহত্যা মহাপাপ। তাই এই সচেতনতা ছড়িয়ে মানুষের মন থেকে বিষণ্ণতা দূর করে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

পরিসংখ্যান বলছে, গতবছর শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১০১ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে আত্মহত্যা করছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে প্রতি লাখে আত্মহত্যা করছেন ৮ দশমিক ৫ জন। এটাকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

সচেতন অভিভাবকরা বলছেন, পরিবারে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকে। এছাড়াও নানা কারণে হতাশা থেকেই বাচ্চারা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। কিন্তু বাচ্চারা কোথায় কী করছে, তা আমাদের জানতে হবে। বাচ্চাদের সঙ্গে যদি নিয়মিত যোগাযোগ না করি, তবে এ সমস্যা বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক বৈষম্য ও সফলতার সঠিক মানদণ্ড নিয়ে অজ্ঞতার জন্যই তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি হতাশ। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিও আত্মহত্যার জন্য দায়ী।

লাইফ স্প্রিংয়ের মনোবিদ ইয়াহিয়া মো. আমিন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তরুণ-তরুণীদের খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে একটা সময় অপরাধমূলক অথবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, কেন সে সংকটে ভুগছে? চারপাশে ক্ষমতা এবং অর্থের দাপট দেখে সে যদি এর ভুক্তভোগী হয়, তখন সে হতাশায় ভুগে। এক সময় আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। সে ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করে বিসিএস দিয়ে পুলিশ হচ্ছে। তার মানেটা কী? এই মেসেজটা রাষ্ট্র বুঝতে পারছে কি না! এটা আসলে নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রের যে কাঠামো থাকে, সেই কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করা।

বিবিএস বলছে, প্রতি বছর গড়ে পাঁচ হাজার করে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে, যেখানে নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান।