ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থী সংগঠন আরএসএসের ‘ভয়াবহ মিথ্যা প্রোপাগান্ডার’ বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন ফ্যাক্ট–চেকার ও সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবাইর। এ জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কয়েকজন গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মী। তাঁরা মোহাম্মদ জুবাইরের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে সার্ক ফোয়ারার সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়। ‘বাংলাদেশ থেকে বন্ধুরা’ ব্যানারে এ কর্মসূচি আয়োজন করেন দেশের একটি ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক মুক্তাদির রশিদ।
ভারতে অল্ট নিউজ নামের একটি ফ্যাক্ট–চেকিং ওয়েবসাইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবাইরকে আটক করেছে সে দেশের পুলিশ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সরব সমালোচক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। অল্ট নিউজের এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের এক টুইটে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, ২০১৮ সালে খুবই পুরোনো একটি সিনেমার রম্য অংশকে (স্যাটায়ার) কেন্দ্র করে জুবায়েরকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে ধর্ম অবমাননার জন্য আটক করা হয়নি। অল্ট নিউজ যাতে আর ফ্যাক্ট–চেক (সত্য যাচাই) করতে না পারে, এ জন্যই জুবাইরকে আটক করা হয়েছে।
আরিফুজ্জামান বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পশ্চিমারাও গুজব ছড়াচ্ছে, রাশিয়াও গুজব ছড়াচ্ছে। তাহলে কোন তথ্যটি সঠিক আর কোনটি মিথ্যা, তা সাধারণ পাঠকের বোঝা মুশকিল। এ জন্যই সারা দুনিয়াতে ফ্যাক্ট–চেকাররা দাঁড়িয়েছেন। আজকের দুনিয়ায় সঠিক তথ্য বোঝার জন্য মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি ফ্যাক্ট–চেকাররাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন।
এই গণমাধ্যমকর্মী আরও বলেন, অল্ট নিউজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জুবায়ের সেখানে কাজ করছেন। ভারতে বিজেপি ও আরএসএসের ভয়াবহ মিথ্যা প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে জুবাইর সব সময় সোচ্চার ছিলেন।
বাংলাদেশে মন্দির পোড়ানো হচ্ছে, এমন একটি ছবি অল্ট নিউজ ফ্যাক্ট–চেক করে দেখিয়েছে, ছবিটি আসলে ভারতের ত্রিপুরার একটি মার্কেটে আগুন লাগার দৃশ্য। তখন এই ছবি পোস্ট করে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের রংপুরে একটি মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরিফুজ্জামান বলেন, ফ্যাক্ট–চেকিংয়ের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসে। মানুষকে কথা বলতে দিলে সত্যটা জানা যাবে। সত্য জানানোর এ প্রচেষ্টাকে নানা কায়দায় থামিয়ে দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সত্য বিষয়কে তুলে আনার কারণে জুবাইরকে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশেও ডিজিটাল অ্যাক্টসহ নানা আইনের কারণে সাংবাদিকেরা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন, বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন।
ভারতের ওই ঘটনা (গ্রেপ্তার) শুধু দেশটির সাংবাদিক জুবাইরের সঙ্গে ঘটেছে তা নয়, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকেরা এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হন মন্তব্য করে নূর খান বলেন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যেখানে যে আন্দোলন হবে, সেখানে মানবাধিকারকর্মীরা সঙ্গে থাকবেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী সাহাদাত পারভেজ, আহমেদ ফয়েজ প্রমুখ।