জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত ফিলিস্তিন, মিয়ানমারের দিকে নজর দেওয়া: তথ্যমন্ত্রী

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত ফিলিস্তিন, মিয়ানমারের দিকে নজর দেওয়া: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত ফিলিস্তিন ও মিয়ানমারের দিকে নজর দেওয়া। আর ভালো হতো যদি তাদের হাইকমিশনার এদেশে ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের কথা শুনতেন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সভা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। গতকাল বুধবার তাঁর সফর শেষ হয়। এ সফরের সময় ব্যাশেলেত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন। গতকাল বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানান। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সুরাহার স্বার্থে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।

আজ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে শিশুরা ইসরায়েলি সৈন্যের দিকে ঢিল ছুড়লে প্রত্যুত্তরে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। আর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশকে বাহবা দিলেই হবে না, মিয়ানমারে গিয়ে সেখানে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটা এসব দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নজর দেওয়া উচিত।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী জিয়া ও তাঁর দল। জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিলেন, খুনিদের পুনর্বাসিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে হাজার হাজার সেনাসদস্যকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিলেন। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে তাঁর তৈরি করে রেখে যাওয়া দল বিএনপি ও তাদের দোসর জামায়াতের হরতাল-অবরোধের নামে শত নিরীহ মানুষকে পেট্রল বোমায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’

মিশেল ব্যাশেলেত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই আইন। আমাদের এ আইন নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের বলব অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে এ আইনের দিকে তাকাতে। সেখানকার আইনে আমাদের চেয়েও কঠিন ধারা আছে। আমাদের যে ধারাগুলো নিয়ে কথা হয়, ভারত ও পাকিস্তানেও একই রকম ধারা আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রেমওয়ার্ক ল করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। সেটির আলোকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের আইন করেছে। কই, সেগুলো নিয়ে তো কোনো কথা বলেন না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনের যাতে কোনো অপপ্রয়োগ না হয়, সে জন্য আমরা সতর্ক আছি, কেউ যাতে নিগৃহীত না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

হাছান মাহমুদ এ সময় গভীর শ্রদ্ধা ও শোকে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের শহীদদের স্মরণ করেন এবং বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কুশীলব ও যারা এর পটভূমি রচনা করেছে, বাসন্তীকে জাল পরিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করেছে, তাদের বিচার ও মুখোশ উন্মোচনের জন্য কমিশন গঠনের দাবির সঙ্গে আমি একাত্ম।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, জিয়াউর রহমান কমিশন্ড অফিসার হিসেবে জীবনের বিনিময়ে হলেও রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্র ও সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে তা ভঙ্গ করে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কুশীলবের ভূমিকা নিয়েছেন। জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাস করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছেন।

বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষা করেছিল ও সরকারি চাকরি দিয়েছিল, তারা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান চায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। এরাই দেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিল এবং এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহাম্মদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাঈদুর রহমান সেলিম প্রমুখ।