চট্রগামে বিএনপির সমাবেশে জনতার ঢল

‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধিনেই হবে নির্বাচন’

‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধিনেই হবে নির্বাচন’

আমাদের এক দফা, এক দাবি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বুধবার চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে দরকার ছিল বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার ছিল, কেননা সরকারের নির্দেশেই গুম-খুন হচ্ছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে যে এখানে গুম-খুন হয়। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের মিটিং হয়েছে। ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনের কথা শোনেন না। তারা শেখ হাসিনার কথা শোনেন। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গত কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে যারা মারা গেছেন তারা সবাই সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছে শুধু দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে।'

'আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ৫০ বছর হয়েছে স্বাধীনতার। তখন আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। এখন আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ করছি,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এ যুদ্ধে যদি আমরা জয়লাভ করতে না পারি, তাহলে দেশ আর দেশ থাকবে না। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। তাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। ২০১৪ সালে তারা একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে নির্বাচন করেছে, বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ শাসনে পরিণত করেছে।'

'প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল পাওয়া যাবে। আজকে চালের দাম ৭০ টাকা। সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এখন আবার বলছেন বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন। এর আগে তারা তেল-গ্যাস-পানির দাম বাড়িয়েছেন। বাড়ানোর একটাই কারণ, শুধু লুট করা ও টাকা পাচার করা। কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাতে তারা এসব লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছেন,' যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'চট্টগ্রামে টানেল বানাচ্ছেন ভালো কথা। কিন্তু লোকজন এখনো খেতে পারে না। দারিদ্রসীমার নিচে এখনো অনেক লোক বসবাস করছে।'

সমাবেশে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আজকের সমাবেশে আসার সময় আওয়ামী লীগ হামলা করেছে, গাড়ি ভেঙেছে। কিন্তু তারপরও তারা লোক সমাগম ঠেকাতে পারেনি। ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না।'

তিনি বলেন, 'বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ৬ বছর ধরে জেলে আছেন, এটা কোনো আইনে পড়ে না। তারা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, দলীয়করণ করেছে। এমনকি পুলিশ-র‍্যাব ও মিডিয়াকেও দলীয়করণ করা হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনি বলেছেন দুর্ভিক্ষ আসছে, তাহলে আপনারা আছেন কী জন্য। নিরাপদে চলে যান, না হলে পালাবার পথ পাবেন না।'

'নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন গঠন করেই নির্বাচন দিতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে তেল-ডাল-বিদ্যুতের দাম কমানো হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী বেকারদের কর্মসংস্থান করা হবে, যোগ করেন তিনি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'তারেক রহমানসহ বিএনপির সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।'

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করুন। এই আন্দোলন আমরা সবখানে ছড়িয়ে দেবো। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটাবো। আজকের সমাবেশে লাখো মানুষ বলেছে ফয়সালা হবে রাজপথে।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৪-১৫ বছর ধরে বিএনপির ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। বিএনপিসহ ৩৭ লাখ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এরপরও বিএনপিকে দুর্বল করা যায়নি। যাদের এত বছরেও দুর্বল করতে পারেননি তাদের আর শেষ সময়ে দুর্বল করতে পারবেন না।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা বাধা দেয় তাদের লিস্ট তৈরি করুন। তাদের বিচার এদেশের মানুষ একদিন করবে।’

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই গণতন্ত্রের যুদ্ধে আমরা আইনি পথে আছি। সরকার বেআইনিভাবে হাঁটছে। এই বেআইনি সরকারের পতন ঘটাতে হবে। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রধানমন্ত্রী নন। কেননা শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেননি। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসী পলোগ্রাউন্ড ময়দানের মহাসমাবেশ থেকে একটি বার্তা দিয়েছে। তা হলো শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ থেকে সারা দেশে একটি বার্তা যাবে, সেটি হলো হাসিনা সরকার পদত্যাগ করুন। কাল কিংবা পরশু নয়, আজকের মধ্যে পদত্যাগ করুন।’

আমির খসরু অভিযোগ করেন, সমাবেশে আসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে ভয় দেখানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেন, বিভাগীয় সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগদান করতে আসার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা যাতে সমাবেশে যোগদান না করে সেজন্য ভয় দেখাতে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মঙ্গলবার রাতে তাদের বাসাবাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে যত বাধাই আসুক না কেন বিএনপি নেতাকর্মীদের থামানো যাবে না, বরং চলমান আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। বিএনপির নেতারা জানায়, নোয়াখালীর কবির হাট থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে কবিরহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমানসহ ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হন। এভাবে আরও বিভিন্ন এলাকায় বাধাগ্রস্ত হন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে আজ বুধবার সমাবেশ করে বিএনপি।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। নগরের পোলো গ্রাউন্ড মাঠ পূর্ণ হয়ে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।