দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সুজন

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সুজন

ইভিএম একটি দুর্বল ও নিকৃষ্ট যন্ত্র উল্লেখ করে সুজনের সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, স্যুট, বুট, টাই পরা ভদ্রলোকও ইভিএম দিয়ে জালিয়াতি করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, তাদের কারিগরি টিম, নির্বাচনী বুথে এবং কেন্দ্রে যে সকল কর্মকর্তারা থাকেন তারা তাদের আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমে অন্যের ভোট দিতে পারেন। এছাড়া যে কোন ইলেক্ট্রনিক জিনিসেই প্রোগ্রামের মাধ্যমে কারসাজি করা সম্ভব। ইভিএমে ভোট গ্রহণ ইলেক্ট্রনিক্যালি হলেও ফলাফল নির্ণয় করা হয় ম্যানুয়ালী।

শুক্রবার ‘কেবল অর্থনৈতিক সংস্কার নয়, সংকট সমাধানে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় রংপুর আরডিআরএস বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে। সেখানে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ইভিএম যন্ত্র কেনা কোনভাবেই উচিত হবে না। ইভিএমে তো সমস্যা আছেই, তার চেয়ে বড় সমস্যা আমাদের নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগনের আস্থা নেই।

গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন সম্পর্কে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে যা ঘটেছে তা এক অর্থে ইতিবাচক ও এক অর্থে নেতিবাচক। ইতিবাচক হলো নির্বাচন কমিশন একটি খারাপ নির্বাচন অর্থাৎ কারচুপি নির্বাচন ঠেকিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ক্ষমতা আছে তা কাজে লাগিয়েছে। এজন্য কমিশন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নির্বাচন বন্ধ করা নয়, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে। একইসঙ্গে অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধেও। তাই নির্বাচন কমিশনের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারা দুঃখজনক।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করে দিয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১১টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ৪টি নির্বাচন মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এসব নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের বিপক্ষ দল ক্ষমতায় এসেছে। বাকী ৭টি দলীয় সরকারের আমলে নির্বাচনের দুটি হয়েছে একতরফা এবং ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এর থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ আচারণ করে না। গাইবান্ধা নির্বাচনে সেটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের করনীয় হলো ক্ষমতাসীন দলকে এবং সরকারকে বলতে হবে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। জাতীয় নির্বাচনে যাতে প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়, সেজন্য প্রয়োজনে সংবিধানের পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল আইনকে অস্ত্রে পরিবর্তন করা হয়েছে। সংবিধানকে অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। যার ফলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হোক, একটি সাংবিধানিক কাঠামোর মাধ্যমে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হোক।

এ সময় রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জুসহ জেলা ও মহানগরের সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।