রাজশাহীর জনসভায় বিএনপি মহাসচিব

নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে

নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে।’

সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এবার শেখ হাসিনাকে পতদ্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদেরকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’

শনিবার রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আবার বলছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় এ দেশে কেনো নির্বাচন হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন- সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যেখানে বার বার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে নিজের প্রয়োজনে। সেই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতে পারে না। তারা এই সংবিধানের অনেক পরিবর্তন করেছে। নতুন নতুন আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। যেখানে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও উস্কানি হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জামিন নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। তাদের লক্ষ্য যেমন করে পারো বন্দুক পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় থাকো। আমরা তো তাদের চাকর নই। এই দেশের মালিক জনগণ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দেয়ালে মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে। দেশের সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ডলারের দাম এখন আকাশচুম্বী। কারণ, সবই তো কানাডা আর মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। ১১ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর বলে মেগা উন্নয়ন করেছে। আর কৃষক সার পায় না। ফসলের দাম পায় না। ঘরে ঘরে চাকরি নেই। দশ টাকায় চাল নেই। কারণ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে। এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। আমরা আর কষ্ট করবো না। এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না। ১৪ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত। ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লড়াই সংগ্রামে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টু সহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এতোদিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। কিন্তু বিরোধী দল আরও নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে।’

‘সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতি ধ্বংস করছে’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান জাতীয় সরকারের কথা বলছেন। বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে। দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে হবে। অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলতে হবে। তাই জেগে উঠতে হবে, দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না দেওয়ার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘নয়াপল্টনেই আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সমাবেশে করেছি। লাখ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ হলে আওয়ামী লীগের তক্তপোষ উপড়ে যাবে। জনগণের প্রতি তাদের আস্তা নাই বলে আওয়ামী লীগ প্রতি মুহূর্তে ভয় পায়, ক্ষমতা বুঝি এই গেল এই গেল।’ 

জঙ্গির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপিকে ধরার জন্য যখন মনে হয় জঙ্গি তৈরি করে। আওয়ামী লীগ নিজেরা অগ্নিসন্ত্রাস করে বাস পোড়ায়, আর বলে বিএনপির লোকেরা নাকি এসব করেছে।’

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ ভাই, আপনারা কি এদেশের সন্তান নন, দেশের মানুুষের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয় না? অসহায় নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার চালাবেন না, মানুষ সহ্য করবে না।’

অর্থনীতির প্রসঙ্গে টেনে ফখরুল বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে গেছে সরকার। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুট করে কানাডাতে পাচার করছে সরকার দলীয় লোকেরা। গত ১০ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।’ 

গণসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১২ হাজার নতুন কোটিপতি হয়েছেন, সাড়ে তিন কোটি হয়েছেন অতি দ্ররিদ্র। কার উন্নয়ন করেছে সরকার? হালাল উপার্জন করে কে শান্তিতে আছে? একজন মানুষ বের করুন। তাই সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই আসায় কোনো বাধা দিয়ে মানুষকে সমাবেশে আসতে আটকে রাখতে পারছেন না।’

নজরুল বলেন, ‘আমাদের নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মী মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা যাতে প্রতিবাদ করি, যাতে তারা দেখাতে পারে—আমরা উচ্ছৃঙ্খল। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। রক্ত চক্ষু দেখে আমরা ভয় পাই না, বন্দুক নিয়ে ৫০ বছর আগে যুদ্ধ করেছি।’

সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার তো আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। বিদেশিরাও বলছে তারা ভোট চোর। আসলে তাদের কোনো লজ্জা নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজকের বাংলাদেশের জন্য নয়। আজকে একটি সমাবেশ করতে হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং জনগণ তিনদিন আগেই এসে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। এটা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? আজকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। তবে মানুষের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করব। রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের যদি আওয়ামী লীগ করার ইচ্ছা হয় তাহলে পোশাক ছেড়ে রাস্তায় এসে বিএনপির সঙ্গে লড়েন। দেখা যাবে কে জেতে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের পরিবার চলে। সুতরাং আমাদের রক্তচক্ষু দেখালে ভয় পাইনা।

সমাবেশের সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সমাবেশ ঠেকাতে সরকার গায়েবি মামলা দিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘট করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবুও আমাদের সমাবেশ মহাসমাবেশে রুপ ধারণ করেছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- আপনারা সরকারকে হলুদ কার্ড দেখান। পরে নেতাকর্মীরা হলুদ ক্যাপ উুঁচু করে ধরেন। যারা পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান দুলু।

বিএনপির রাজশাহী মহানগরীর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও মামুনুর রশিদ ও শ্রী বিশ্বনাথ সরকারের পরিচালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্নেল এম এ লতিফ খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহিন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাদিম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।