সাংবাদিক রোজিনার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের

সাংবাদিক রোজিনার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের

জাতিসংঘের চারজন বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার চর্চা বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বুধবার এক বিবৃতিতে তারা এসব দাবি তুলে ধরেছেন। তারা হলেন, মতপ্রকাশ ও প্রচারের অধিকার সংরক্ষণ এবং উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর আইরিন খান, মানবাধিকারকর্মীদের অবস্থা বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর মেরি ললর, নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতার কারণ এবং পরিণতি বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর রিম আলসেলাম এবং বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর মার্গারেট স্যাটাথুয়েট।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে- রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা দৃশ্যত তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ও সেল্ফ সেন্সরশিপের সংস্কৃতি উৎসাহিত করতে বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেন। ২০২১ সালের ১৭ই মে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে বিনা অনুমতিতে কোভিড-১৯ এর টিকা ক্রয়সম্পর্কিত সরকারি নথিপত্রের ছবি মোবাইলে তোলার দায়ে তাকে অভিযুক্ত ও আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলা করা হয়। ২০২২ সালের ৩রা জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে বলা হয়, রোজিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাত মাস পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে একই আদালত পুলিশকে অভিযোগ অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানি ২৪শে ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা, যা প্রায়ই ভিত্তিহীন এবং পরে সেসব মামলার মীমাংসা না করে ঝুলিয়ে রাখার বিপজ্জনক প্রবণতারই প্রতিফলন রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলার দীর্ঘসূত্রতার বৈশিষ্ট্য। তাদের হুমকি দেয়া, ভয় দেখানো, হয়রানি করা ও চুপ করিয়ে দেয়ার উপায় হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়।