আশ্রয়শিবিরে ঘুরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল

আশ্রয়শিবিরে ঘুরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান মারি ট্রিভেলিয়ানের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ সময় দলের সদস্যরা আশ্রয়শিবিরে ঘুরে ঘুরে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

শনিবার সকালে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায় তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলটি। সেখান থেকে সড়কপথে ৫৫ কিলোমিটার দূরের বালুখালী আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন দলের সদস্যরা। 
এ সময় ৫ মার্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বালুখালী (ক্যাম্প-১১) আশ্রয়শিবির ঘুরে দেখেন ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

প্রতিনিধিদলের অপর তিন সদস্য হলেন যুক্তরাজ্যের ঢাকাস্থ দূতাবাসের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, যুক্তরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী শাওমা মহাপত্র, মিয়ানমারের ঢাকাস্থ দূতাবাসের পরিচালক মো. বারীকুল ইসলাম। তবে দলটির কেউ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।

আশ্রয়শিবিরগুলোর মানবিক সেবামূলক কাজে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থাগুলোর (এনজিও, আইএনজিও) কার্যক্রম ঘুরে দেখে প্রতিনিধিদলটি।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার শহরে ফিরে স্থানীয় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন দলের সদস্যরা।

উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিনিধিদলটি বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) পৌঁছে একাধিক উন্নয়ন কার্যক্রম, লার্নিং সেন্টার, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করে। এরপর দলটি পাশের ১৮ ও ২০ নম্বর আশ্রয়শিবিরে গিয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে কথা বলে।

কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ৫ মার্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জীবনযাত্রা, নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন বালুখালীর আশ্রয়শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা। তাঁদের একজন মনির উল্লাহ বলেন, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন, আগুন কীভাবে লেগেছে, আগুনে তাঁদের কী কী পুড়েছে, এখন পযন্ত তাঁরা কী কী সহায়তা পেয়েছেন। জবাবে তিনিসহ কয়েকজন প্রতিনিধিদলের কাছে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন।

ধ্বংসস্তূপের ওপর দ্রুত সময়ের মধ্যে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নেওয়ায় রোহিঙ্গাদের ভূয়সী প্রশাংসা করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের তহবিলসংকট দেখা দিয়েছে। আগের তুলনায় দাতাগোষ্ঠীর বরাদ্দও কমেছে। মূলত রোহিঙ্গাদের জীবনে এর প্রভাব কতটুকু পড়েছে, তা সরেজমিন দেখতে প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে এসে উখিয়ার কয়েকটি আশ্রয়শিবির ঘুরে দেখেছে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নানা ইস্যুতে কথা বলেছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছে তারা।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে (আরআরআরসি) এসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এতে দলের সদস্যরা আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা তরুণদের কাজে ব্যস্ত রাখার তাগিদ দেন।