যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

প্রধানমন্ত্রীর কোন জিনিস না কেনার ঘোষণার ২ দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কেনার সিদ্ধান্ত

প্রধানমন্ত্রীর কোন জিনিস না কেনার ঘোষণার ২ দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কেনার সিদ্ধান্ত

দুই দিন আগেই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কোনরকম কেনাকাটা করবে না বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়কে তিনি এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। অথচ দুই দিন না পেরুতেই বাংলাদেশের র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকায় সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে এই চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কোম্পানি এক্সেনচুয়াল টেকনোলজি ইনকরপোরেশন (স্থানীয় এজেন্ট ওএমজি লিমিটেড) থেকে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ৮২ টাকা ৮৫ পয়সা।

যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা হবে না বলে দুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বাংলাদেশের র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে, সেই দেশের কোম্পানির কাছ থেকে চিনি কেনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ''বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা হয়নি।''

প্রধানমন্ত্রী বলার পরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার লঙ্ঘন হলো কি না? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন পাল্টা প্রশ্ন করা হলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ''এ বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমি রাখি না।''

এর আগে গত ৯ মে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সিঙ্গাপুরের স্মার্ট মেট্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড (স্থানীয় এজেন্ট মার্ক লাইন এন্টারপ্রাইজ) থেকে সাড়ে ১২ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় খরচ ধরা হয় ৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনির দাম ধরা হয় ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা।

উল্লেখ্য, গত সোমবার  গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ। 
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ''আমাদের কী কারণে স্যাংশন দিল? যাদের দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, জঙ্গি দূর করলাম, তাদের ওপরে? হোলি আর্টিজানে যারা হামলা করেছিল, তাদের দমন করে মানুষ জীবিত উদ্ধার করতে কিন্তু ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। এরপরেও আরও কোন ঘটনা কেউ ঘটাতে পারেনি। এরপরেও স্যাংশনটা কিসের জন্য?''

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা এখনো বহাল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "আমি এই জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রীকে বলে দিয়েছি, আমাদের কেনাকাটা - বিদেশ থেকে জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটা ক্লজ (শর্ত) থাকবে, যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কোন জিনিস আমরা কিনবো না। তাতে ভয়ের কি আছে? আমরা তো কারও ওপর নির্ভরশীল না। আমাদের যা দরকার, আমরা নিজেরাই তো উৎপাদন করতে পারি।"

''কথা নাই বার্তা নাই, স্যাংশনের ভয় দেখাবে, আর আমরা ভয়ে মুখ বুঝে থাকবো কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দেখিয়েছিল, সেটাও পার করে বিজয় অর্জন করেছি, এই কথা ভুললে চলবে না। দরকার হলে এক বেলা খেয়ে থাকবো, তাতেও অসুবিধা নেই,'' বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

''আমাদের ওপর যারা স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু কিনবো না, পরিষ্কার কথা। এর মধ্যেই আমি দুটি অ্যাকশন নিয়েছি আগেই।''

এর আগে গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেবে, তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো পণ্য কিনবে না। 

তিনি বলেন, "আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের থেকে কিছুই কিনব না।"