প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে ‘অস্বীকৃতির’ অভিযোগে তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে ‘অস্বীকৃতির’ অভিযোগে তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের পদক নেওয়ার জন্য বক্তব্য দেওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে আজ বৃহস্পতিবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে দুজন শিক্ষক পদকপ্রাপ্ত। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বলছে, প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণে ‘অস্বীকৃতি’ জানিয়ে সাক্ষাৎকার প্রদান এবং অন্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানে উৎসাহ দেওয়ায় শৃঙ্খলাভঙ্গ হয়, যা সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আচরণপরিপন্থী। এ জন্যই ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যদিও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের একজন রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে কোনো বক্তব্য দিইনি; বরং তাঁর কাছ থেকে পদক গ্রহণও করেছি। আমি কেবল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলাম।’ তিনি ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছিলেন বলে জানান।

সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া অপর দুই শিক্ষক হলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম (পদকপ্রাপ্ত) এবং জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুবর রহমান। এ বিষয়ে আজ রাতে শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাপত্র থেকে জানা যায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ এবং শিক্ষা পদক ২০১৯ ও ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানের মহড়া অনুষ্ঠান হয় গত ১১ মার্চ ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে। মূল অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন পদক তুলে দেওয়ার বিষয়টি জানার পর উপস্থিত শিশুদের অভিভাবক এবং কিছু শিক্ষক প্রতিমন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণের দাবি জানান। একপর্যায়ে কিছু শিক্ষক ও অভিভাবক মুঠোফোনে সাক্ষাৎকার (বক্তব্য) দেন এবং অন্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানে সহায়তা করেন, যার ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। এ জন্য গত মার্চে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ঢাকা, রাজবাড়ী ও জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্তের আদেশ জারি করে। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহারকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ফোন করলে তিনি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে ফোন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আগামী রবিবার কথা বলবেন তিনি।