ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ ঘণ্টার যানজটে নাকাল মানুষ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ ঘণ্টার যানজটে নাকাল মানুষ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে যানজট দেখা দেয়। উপজেলার ভাটিয়ারী বাজারের যানজট চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। ১২ ঘণ্টা পর গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ এ যানজটে মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিন দিন ধরে দুপুরের পর থেকে যানজট শুরু হয়। যানজট চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। উপজেলার ভাটিয়ারী বাজারের টিকিট কাউন্টারের সামনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো মহাসড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। যার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। আগে সেখানে বাসগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশ থাকত। এখন সেখানে ট্রাফিক পুলিশ নেই।

হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কের ভাটিয়ারীতে লালপোল সেতু এলাকায় স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) দেওয়ার কারণে সব কটি যানবাহনকে ওই এলাকায় ধীরে চলতে হয়। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ফৌজদারহাট বায়েজিদ ও ফৌজদারহাট বন্দর-সংযোগ সড়কের মাথায় ফৌজদারহাট ট্রাফিক বক্সের সামনে গাড়ি লেন পরিবর্তনের সময় জট লেগে যায়।

গতকাল রাতে সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের ভাটিয়ারী বাজার থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যানজটে থাকা গাড়িগুলো কখনো ধীরে চলছে। আবার কখনো দাঁড়িয়ে পড়ছে। ভাটিয়ারী বাজার এলাকায় অনেক যাত্রীবাহী বাস মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। কিন্তু সেখানে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এ ছাড়া ফৌজদারহাট ট্রাফিক বক্সের সামনে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থেকে আসা গাড়িগুলো উল্টো পথে এসে মহাসড়কে ঢাকামুখী লেনে উঠতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে।

মহাসড়ক ধরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান চট্টগ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ভাটিয়ারী থেকে কালুশাহ নগর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তার এক ঘণ্টা লেগেছে। কিন্তু পথে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা দেখেননি।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে বাড়িতে ফিরছিলেন রুবেল মাহমুদ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, যানজটের কারণে তিন দিন ধরে বাসায় পৌঁছাতে রাত একটা বেজে যায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে তিনি রাত ১০টায় বাসায় পৌঁছে যান।

ফৌজদারহাট এলাকায় কথা হয় উত্তরা পরিবহনের চালকের সহকারী জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট থেকে তিনি যানজট পান। পৌনে এক ঘণ্টায় তিনি দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন।

ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নবী সোহেল বলেন, ভাটিয়ারী-বড় দীঘিরপাড় সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করছেন তিন দিন ধরে। তারা মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। কেউ পদচারী-সেতু ব্যবহার করছেন না। যার ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

যানজটে থাকা গাড়িগুলো কখনো ধীরে চলছে। আবার কখনো দাঁড়িয়ে পড়ছিল

ভাটিয়ারী এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাটিয়ারী বাজারে প্রায় সব বাসের কাউন্টার রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য কাউন্টারের সামনে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে পড়ে। এর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু গত তিন দিন নয়, এ যানজট সব সময় লেগে থাকে। হাইওয়ে পুলিশ থাকলেও চালকেরা মানেন না।

বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহাসড়কের ভাটিয়ারী বাজারে এসে নামছেন এবং তাঁরা আবার দিন শেষে একই পথে তাঁদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। যার কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। লালপোল সেতু এলাকায় গতিরোধকের কারণে যানজট আরও বেড়ে যায়।

ওসি আরও বলেন, ভাটিয়ারী বাজার এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ এখন থাকে না। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের টহল দল ওই এলাকায় থাকে। তাঁর দাবি, হাইওয়ে পুলিশ যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ বাসগুলোকে মহাসড়কে দাঁড়াতে দেয় না। যেই হাইওয়ে পুলিশ টহলে অন্য কোনো স্থানে যায়, তখন আবার যাত্রীবাহী বাসগুলো মহাসড়কে দাঁড়িয়ে পড়ে যাত্রী ওঠানামা করে।

হাইওয়ে পুলিশের টহল দলে ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে লাগা যানজট স্বাভাবিক হতে রাত ১২টা পার হয়ে গেছে। ভর্তি পরীক্ষা, বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরা যাত্রীদের চাপ, গাড়ির চাপের মধ্যে ইউটার্নে গাড়ি ঘোরানোর কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। যানজট স্বাভাবিক করতে তাঁদের বেগ পেতে হয়েছে।