ইইউ প্রতিনিধিদলের ব্যস্ত দিন, কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক

ইইউ প্রতিনিধিদলের ব্যস্ত দিন, কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ঢাকা মিশন শুরু হয়েছে। রবিবার সফরের প্রথম দিনে প্রতিনিধিদলের ৬ সদস্য ৩ দফায় ঢাকাস্থ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাস প্রতিনিধির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন প্রধানের কার্যালয়ে ওই বৈঠকগুলো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে আসা ইইউ’র ৬ সদস্যের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল আগামী ২৩শে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। 

সফরের দ্বিতীয় দিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হবে। যেখানে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। দুপুরে ইইউ টিম যাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে। বিকালে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিনিধিদলটির মূল কাজ হবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবে। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। 

আগেই জানানো হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহের ওই সফরে ইইউ টিম নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে বসবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাদের সিরিজ বৈঠক হবে। ঢাকা সফরের পর ইইউ টিম যে রিপোর্ট দিবে তার ওপর ভিত্তি করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত আসবে। উল্লেখ্য, ইইউ প্রতিনিধিদল রোববার যেসব দেশ ও সংস্থার  প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা হলো- ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস এবং জাতিসংঘ। সরজমিন বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ এবং নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল শনিবার ঢাকায় পৌঁছায়। উল্লেখ্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সব অংশীজনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সদস্যদেশগুলো নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ইইউ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা এবং সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেককে লেখা এক ফিরতি চিঠিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ওই নির্বাচনে সব অংশীজনের ভূমিকা চেয়ে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা সৃষ্টির জন্য সব অংশীজনকে ভূমিকা রাখতে হবে। আর সে জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ এবং নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। 

জোসেপ বোরেলকে গত ১২ই জুন একটি চিঠি লিখেছিলেন ইভান স্টিফেনেকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। তাতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাদের ওই চিঠির জবাব দেন জোসেপ বোরেল। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১২ই জুন ওই চিঠি দেয়ার জন্য ইভান স্টিফেনেককে ধন্যবাদ জানান জোসেপ বোরেল। ওই চিঠিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য যে উদ্বেগ জানান, সে বিষয়ে অবগত আছেন বলেও ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি তার ফিরতি চিঠিতে উল্লেখ করেন। 

জোসেপ বোরেল লিখেন, বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিস্থিতি, উপকারিতা ও সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার জন্য তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের কথা উল্লেখ করে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক স্বাধীনতাগুলোর সুরক্ষা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। যেকোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা করে ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধ ও নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

তাই এ বিষয়গুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিতভাবে উত্থাপন করে থাকে। ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইইউ নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখছে। তিনি যেন সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসা সুবিধা পান, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ইইউ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ওদিকে ইইউ প্রতিনিধিদলের সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করণীয় নেই জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাদের জানানো হয়েছে, সফরকারী ইইউ’র অনুসন্ধানী টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতেই দ্বাদশ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানো বা না পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেগুনবাগিচা জানায়, কেবল অনুসন্ধান টিম নয়, মানবাধিকার বিষয়ক ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছেন। সফরকালে তিনি কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।-মানবজমিন