আবারও চড়া পেঁয়াজের বাজার, নেই তদারকি

আবারও চড়া পেঁয়াজের বাজার, নেই তদারকি

আবারও বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। তিন-চার দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। স্থানীয় হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কম এবং ভারত থেকে দু’দিন ধরে আমদানি কম হওয়াকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে নেই তদারকিও।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। পরের দিন শুক্রবার কিছুটা কমে দেশি পেঁয়াজ ৭০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে ভালো মানের (পাবনার) দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। এ ধরনের পেঁয়াজ খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কেজি ৮০ টাকা দরে। তবে এর আকারভেদে স্থানীয় ছোট বাজার ও মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা দরে। এ ছাড়া দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বড় বাজারগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা দরে। মহল্লার দোকানে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে আরও ৫ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৮২ শতাংশ বেশি এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩৩ শতাংশ বেশি।

কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ট্রেডার্সের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, দাম কৃষক পর্যায়ে বেড়েছে। তিন-চার দিন ধরে রাজশাহী-পাবনার হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ৫০ বস্তা কিনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থকে ৪০ বস্তা। তা ছাড়া ভারত থেকেও আমদানি কিছুটা কম। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব ভারতীয় পেঁয়াজে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মে মাসে অস্বাভাবিক বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। এক পর্যায়ে দাম গিয়ে ঠেকে শতকে। এর পর কৃষি মন্ত্রণালয় গত ৫ জুন থেকে আমদানির অনুমতি দিলে দাম কিছুটা কমে আসে। ধাপে ধাপে কমে তখন ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় নেমে আসে। এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। যদিও দেশে গত অর্থবছরে ভালো ফলন হয়েছে পেঁয়াজের। পাশাপাশি আমদানিও হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন। তবে উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। গড়ে ৩০ শতাংশ নষ্ট হলেও মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ টন। অন্যদিকে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। সেই হিসাবে ২ থেকে ৪ লাখ টনের ঘাটতি থাকে। অথচ এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত আমদানি হয়েছে প্রায় তিন লাখ টন।

বাজারে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন এবং আমদানির বিষয়গুলো দেখভাল করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি পর্যালোচনা করে তার ওপর ভিত্তি করে ভোক্তা অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের মজুত রয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টন। তার পরও আমদানি করা হচ্ছে। তবু দাম বাড়ছে কেন– সেই প্রশ্ন এলে ব্যবসায়ীদের কাছে করা উচিত। তিনি বলেন, যদি দেশে ঘাটতি বেশি হতো, তাহলে তো ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর মাত্র ৩ লাখ টন এসেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশে মজুত ভালো থাকায় তারা ধীরগতিতে আমদানি করছেন।

দাম বাড়ার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত আছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি কাঁচামরিচের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে দামের বিশাল ব্যবধান। আমদানির পর দেখা গেছে, একই কাণ্ড। আমদানি মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম অনেক বেশি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।