সহিংসতা, ভোট দিতে না পারার অক্ষমতায় রাজনীতির প্রতি তরুণদের অসন্তোষ বাড়ছে: পিটার হাস

সহিংসতা, ভোট দিতে না পারার অক্ষমতায় রাজনীতির প্রতি তরুণদের অসন্তোষ বাড়ছে: পিটার হাস

বাংলাদেশের তরুণদের রাজনীতির প্রতি অসন্তোষ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর পেছনের কারণের মধ্যে রয়েছে-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি, বাক্‌স্বাধীনতায় বাধা, যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের একচেটিয়া ছাত্ররাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থার অভাব এবং ভোট দিতে না পারার অক্ষমতা। তরুণদের ভাষ্য তুলে ধরে এ মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গণতন্ত্রের চর্চার জন্য সোচ্চার হতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার বিকালে বনানীর একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে এসব কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সব ধরনের মানুষ ভূমিকা পালন করতে পারে ও ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা রাজনৈতিক দল ভোটে হেরে যায়।

‘যুব আলোচনা: নাগরিক প্রত্যাশা’ শিরোনামে এই সম্মেলন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা তরুণেরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, নাগরিকদের প্রত্যাশাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে রাজনীতি ও নির্বাচন যুক্ত। রাজনৈতিক দল তাদের পরিকল্পনা নাগরিকদের কাছে তুলে ধরে এবং নাগরিকেরা সিদ্ধান্ত নেন কোন দল তাদের জন্য ভালো ও সে অনুযায়ী ভোট দেন। যে দল নাগরিকদের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়, সে দল ভোটে হেরে যায়। ভোটে জেতা ও হারা-এ দুটো বিষয়ই কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা সবাই জানে। বাংলাদেশের ভিত্তি মজবুত করেছে ছাত্ররাজনীতি। তবে এই অনুষ্ঠানে তিনি শুনেছেন, রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের সংস্কৃতি কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহিংসতা হচ্ছে। দুর্নীতি, বাক্‌স্বাধীনতায় বাধা থাকায়, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আস্থা হারিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন তরুণেরা। এসব কারণে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ বাড়ছে তরুণদের।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামীর পথচলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তরুণেরা। তারা নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আসবেন। তরুণদের দায়িত্ব এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা। তরুণদের কণ্ঠ ও উদ্যোগে তারা যেমন বাংলাদেশ দেখতে চান, তা গড়ে উঠবে। তরুণেরা এগিয়ে এলেই পরিবর্তন আসবে। সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়ে পিটার হাস বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চার জন্য আপনারা সক্রিয় হোন। আপনারা সোচ্চার হলে দল তরুণদের দাবির প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করবে।’  

ভুয়া তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে পিটার হাস বলেন, তার অফিশিয়াল কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ তার নামে অনেক মন্তব্য সেখানে পোস্ট করা হয়। এমন এমন জায়গায় তার যাওয়ার ছবি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তিনি যাননি। এটা শুধু তার সঙ্গে নয়, অনেকের সঙ্গেই হচ্ছে। তরুণদের এসব ভুয়া তথ্যের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও তারা এসেছেন, এটা প্রশংসনীয়। সমাজে সমস্যাগুলো একে-অপরের সঙ্গে কথা না বলে সমাধান করা কঠিন।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ছাত্র অবস্থায় তারা অনেকেকে দেখেন যে ১০ বছর আগে যিনি ভ্যানগাড়িতে চড়তেন, রাজনীতি করে তিনি এখন পাজেরো চালাচ্ছেন। ফলে রাজনীতি নিয়ে তরুণদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। রাজনীতির মধ্যে কীভাবে ঢুকবেন, একবার ঢুকে গেলে হয়তো বের হতে পারবেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, এখন দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে তরুণেরা রাজনীতিতে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের মনে প্রশ্ন-কেন ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারেননি?

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ভোটের মাধ্যমে তরুণেরা সমাজকে একটি কাঠামো দিতে পারেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস।