১০ ডিগ্রির নিচে নামলো পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা

১০ ডিগ্রির নিচে নামলো পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রের্কড হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত। পৌষ এবং মাঘ পঞ্চগড়ে শীতের তীব্র প্রকোপে প্রাণ প্রকৃতির উপর চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই দু'মাসের পুরো অংশই মৃদু, মাঝারি এবং তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আবর্তে কাটাতে হয় এই শীত কবলিত অঞ্চলের মানুষকে।

এক অংকের তাপমাত্রা নিয়ে শীত স্থায়ী আস্থানা তৈরি করে সীমান্ত এই জনপদে। ঘন কুয়াশা, বৃষ্টির মতো তুষারপাত সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা হিম বাতাস পঞ্চগড়ের সীমান্ত জনপদের মানুষরে স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে দুর্বিসহ করে তোলে।

ইতোমধ্যে হিমালয় থেকে ধেঁয়ে আসতে শুরু করেছে ঠান্ডা বাতাস। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূয্যের হালকা তাপ থাকছে। তারপর হিমালয় থেকে বাতাস বইতে শুরু হলে সন্ধ্যা হতেই হাটবাজারসহ রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশুন্য। মানুষজন হয়ে পড়ছে ঘরমুখী। বিশেষ করে এই অঞ্চলের সমতলের চা বাগানের চা শ্রমিকসহ নদী কেন্দ্রীক পাথর শ্রমিকরা নদীর ঠান্ডা জলে নামতে না পেরে তাদের জীবন জীবিকায় টান পড়েছে। জীবিকার তাগিদে নদী পাড়ে বসে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে অবশেষে ঠান্ডা পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করছে। জীবন জীবিকার স্বার্থে শীত বস্ত্রের সঙ্গে শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পঞ্চগড় রাজনগর এলাকার অটোরিকশা চালক সমশের আলী জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে আয় ইনকাম কমে গেছে। সকালে এবং সন্ধ্যায় শহরে লোকজন কমে গেছে। যাত্রী হয় না শীতের কারণে।

শহরের টিন পর্টির আবুল কাশেম বলেন, শীতের কারণে রাতে মালামাল লোড আনলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। কাজ কমে গেছে। এই দু মাস কষ্ট হয় সংসার চালাতে। শহরতলীর বেংহাড়ি ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম, আকবর আলী সুমন হাসনাত ইট ভাটায় কাজ করে। তীব্র শীতে কাজকর্ম করতে না পারায় বাড়িতে বসে আছেন। অনেকে অর্ধেক দিন কাজ করছেন। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে বলে তারা জানান।

প্রথম পৌষেই পঞ্চগড়ে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। দিনদিন তাপমাত্রা আরও কমে আসছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকে এই জেলায় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। পৌষের প্রথম দিনেই তাপমাত্র নেমেছে এক অংকের ঘরে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা পৌষে এবং মাঘে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। ৬ ডিগ্রির নিচে গড়িয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি করবে এবং টানা জানুয়ারি পর্যন্ত তীব্র শীতের প্রকোপ থাকবে।

এদিকে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় জেলার হাসপাতালগুলোতে দিনদিন শীতজনিত রোগে শিশু এবং বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, টানা তীব্র শীতে গবাদি পশুর নানা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। গরু ছাগলের সর্দি, ডাইরিয়াসহ খুরা রোগ দেখা দিয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র শীতার্তদের জন্য সামান্য পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে অর্বননীয় দুর্ভোগ। তীব্র শীতে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। আগামী দুমাস শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন জানিয়েছে, বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় গত দু'সপ্তাহ ধরে ৯ থেকে ১১ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। আজ সোমবার তাপমাত্রা নেমে গেছে ৯ ডিগ্রির ঘরে। পৌষ পড়লেই এটি আরও নিচে নেমে আসবে। জানুয়ারি মাসের পুরো সময়জুড়ে মাঝারি শৈতপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।

এদিকে দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। গত তিনদিন ধরে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রির ঘরে ওঠানামা করলেও সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) জেলার কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে সকাল ৬টায় ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।