দুর্বৃত্তদের পকেট ভারী করতেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : মির্জা আলমগীর

দুর্বৃত্তদের পকেট ভারী করতেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : মির্জা আলমগীর

দুর্বৃত্তদের পকেট ভারী করতেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআইআরসি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরদিন সোমবার সকালে মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “১৭৫ টাকা প্রতি চুলায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বাড়ানো হয়েছে, শুধুমাত্র তাদের যে ব্যবসায়ী যারা এলএনজি গ্যাস আমদানি করছে, তাদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, তাদের পকেট ভারী করার জন্য এবং দুর্বৃত্তদের পকেট ভারী করার জন্য তারা (সরকার) এটা করেছে।

“এই সরকার নিজেরাই একটা লুটেরা সরকার, এই সরকার নিজেরাই একটা লুণ্ঠনকারী সরকার। তারা জনগণকে লুণ্ঠন করছে- এটাই মূল কথা।”

গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়ে সোমবার বিভিন্ন পর্যায়ের গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে রান্নার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের চুলাপ্রতি ১৭৫ টাকা বেশি দিতে হবে। এখন একচুলার জন্য মাসে ৯২৫ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাজেটের মাধ্যমে একদিকে জনগণের সম্পদকে লুট করে নিচ্ছে, অন্যদিকে তারা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে আরো বেশি করে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই সরকার এক এক করে রাজনৈতিক জীবনে, অর্থনৈতিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে এক ভয়াবহ সংকটের সৃষ্টি করেছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের বিরোধিতা করায় তাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ২৬ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আছে, এক লাখ মানুষের ওপরে মামলা আছে, দেড় হাজারের ওপরে মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য।

“এদেশের মানুষ অসহায়। কোনো রকম আশ্রয় ছাড়া, কোনো রকম আইনের শাসন ছাড়া তারা করুণ অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। তারা পরিকল্পতভাবে এই সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকট সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (এ্যাব) উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বারবার বলেছি, আবারও বলছি- বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অবিলম্বে এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচন দিয়ে জনগণের সংসদ এবং জনগণের সরকার তৈরি করে দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, কখনও কোন একনায়ক, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচার শাসক দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারেনি। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে তারা পরাজিত হয়েছে। আর এর মাধ্যমে জনগণের সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বর্তমান দানব সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হবো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এই সঙ্কট নিরসনের একমাত্র পথ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাঁকে মুক্তি দিলেই আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখতে পারি।

মির্জা আলমগীর বলেন, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত, চিরস্থায়ী ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ও অনৈতিকভাবে প্রায় ১৬ মাস কারাগারে অন্তরীণ করে রেখেছে এই বেআইনি সরকার। আর বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখা মানে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারকে আটক করে রাখা।

সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জনগণকে লুণ্ঠন করছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে সরকার সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে তারা। গ্যাসের বাড়তি দাম প্রত্যাহার না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

এ্যাবের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. মহসিন আলীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর পরিচালায় মানববন্ধনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, ড্যাবের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

এমজে/