খালেদা জিয়া অবশ্যই বীর মুক্তিযোদ্ধা: মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়া অবশ্যই বীর মুক্তিযোদ্ধা: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা হবেন না তো কে মুক্তিযোদ্ধা হবেন যারা আত্মসমর্পণ করে ভারতে বেড়াতে গেছিলেন তারা? সেই বেগম জিয়াকেই মুক্তিযোদ্ধা বলেছি। বেগম জিয়া অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা। বেগম জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তার যোগ্যতা দ্বারা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ঠাকুরগাঁও পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, তখন খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের (সেনানিবাস) বাসায় তাঁর দুই শিশুপুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ছিলেন। ওই সময় অষ্টম বেঙ্গলের সেনারা চলে এসে বলেছিল, “পাকিস্তানি সেনারা বলছে অস্ত্র সমর্পন করতে। আমরা অস্ত্র সমর্পণ করব কি না?’’ তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের অধিনায়ক মেজর জিয়ার নির্দেশ ছাড়া তোমরা কোনো অস্ত্র সমর্পণ করবে না।’’ সেই দিন থেকেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বললাম, তখন আওয়ামী লীগের লোকেরা ভীষণ বেজার হয়ে গেলেন। তাঁরা বকাবকি শুরু করলেন। এমনকি একজন নামকরা মুক্তিযোদ্ধা বললেন, হায় আল্লাহ, তিনিও মুক্তিযোদ্ধা!’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন সেনাবাহিনীকে না বলার মধ্য দিয়ে ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আত্মীয়ের বাসায় থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। একপর্যায়ে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন করেন, ‘তিনি মুক্তিযোদ্ধা হবেন না তো কে মুক্তিযোদ্ধা হবেন? যারা পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল আর ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবে?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন গণতন্ত্রকে হরণ করে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করল, যখন সবাই ভেবে নিয়েছিল বিএনপি শেষ, গণতন্ত্র শেষ, তখন এই নেত্রী (খালেদা জিয়া) স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর গণতন্ত্রের পতাকাটা হাতে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ বছর তিনি গ্রামেগঞ্জে, হাটে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেননি বা মিড নাইট নির্বাচন করে জোর করে ক্ষমতায় বসেননি। রাজপথে সংগ্রাম করে এরশাদকে উৎখাত করে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।’

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে আমরা সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেছি। অনেকেই বলছেন আন্দোলন দেন। আন্দোলন শুধু হরতাল-অবরোধ নয়। এই যে হাজার হাজার মানুষ চিৎকার করে বলছে, ‘‘খালেদা জিযার মুক্তি চাই’’, এটাও একটা শক্তিশালী আন্দোলন। আপনারা ফুটবল খেলা দেখেছেন। খেলা শুরুর আগে টিমগুলো ওয়ার্মআপ করে। এটা হচ্ছে সেই ওয়ার্মআপ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, ঠাকুরগাঁও থেকে চট্টগ্রামে—সব জায়গাতেই আন্দোলনের ওয়ার্মআপ শুরু হয়েছে। এ আন্দোলন ততক্ষণ বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন আর তাঁর সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠোনো হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর আমরা ভোটাধিকার হরণ দিবস হিসেবে পালন করছি। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের রাতে হয়ে গিয়েছিল। ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চাই। এই হাসিনা সরকারকে যদি আমরা সরাতে না পারি, তবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভোমত্ব বিপন্ন হবে। এই সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই যত দিন পর্যন্ত এই সরকারকে সরাতে না পারছি, তত দিন পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলন চলবে, চলবে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।