রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ

ঈদগাহ মাঠের তাঁবুতে কাটল দ্বিতীয় রাত, চিড়া-গুড়ে শুরু সকাল

ঈদগাহ মাঠের তাঁবুতে কাটল দ্বিতীয় রাত, চিড়া-গুড়ে শুরু সকাল

শীতের সকালের সূর্য সবে মিষ্টি রোদ বিলাতে শুরু করেছে। তাঁবুর মধ্যে অনেকেই তখনো গায়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছেন। যাঁরা আগে ঘুম থেকে জেগেছেন, তাঁরা চিড়া-গুড় খাওয়ার আয়োজন করছেন। বাইরে তখন শুরু হয়ে গেছে খিচুড়ি রান্নার আয়োজন। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতা-কর্মী তাঁবুর সামনের রোদে আড্ডায় মেতে উঠেছেন।

আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের পাঠানপাড়ার শাহ মখদুম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সারি সারি তাঁবুতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেল। ধর্মঘটের কারণে দুই দিন আগে থেকে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে আসা বাইরের জেলার নেতা-কর্মীরা সমাবেশ মাঠের পাশের ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছেন।

রাজশাহীতে গণসমাবেশের জন্য নগরের হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের (মাদ্রাসা মাঠ) অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে শুধু আগামীকাল শনিবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওই মাঠ ব্যবহার করতে পারবে দলটি। ফলে অন্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো বিএনপি মাদ্রাসা মাঠে নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। পাশের ঈদগাহ মাঠ সেই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মাঠে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। গত রাতে জেনারেটরের মাধ্যমে মাঠে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনেক তাঁবুতে কোনো আলো ছিল না। নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যার আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলেন। রাত ১০টা পর্যন্ত মাঠে থেকে দেখা গেছে, মাঠের সামনের রাস্তায় মানুষ গিজ গিজ করছিল।

আজ সকাল আটটায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপি নেতা–কর্মীদের তাঁবুতে গিয়ে পাওয়া গেল আইয়ুব আলীকে। তিনি তখন চিড়া–মুড়ি খাচ্ছিলেন। বললেন, তাঁরা গত বুধবার রাতে এসেছেন। প্রায় সাড়ে চার শ নেতা–কর্মী একসঙ্গে তাঁবুতে রাত কাটিয়েছেন।

নওগাঁর ১১ থানার নেতা-কর্মীদের বড় এক শামিয়ানার নিচে রাখা হয়েছে। তাঁদের কেউ তখনো কম্বল জড়িয়ে শুয়ে রয়েছেন। সকালের খিচুড়ি রান্না হয়নি। তাই অনেকেই চিড়া–গুড় খেয়ে নিচ্ছেন। এই তাঁবুর আতিকুর রহমান বললেন, তারা গতকাল বাংলাবান্দা ট্রেনে চড়ে বেলা আড়াইটায় রাজশাহীতে এসে নেমেছেন।

এরই মধ্যে তাঁবুতে এসে ঢুকলেন মান্দা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসমা ইসলাম ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি মমতা হেনা। তাঁরা বললেন, ভোররাতে তাঁরা অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন। ডান-বাম করে পুলিশের চেকিং এড়িয়ে তাঁরা এলেন। মান্দা উপজেলার বাসির গ্রামে আবদুল হাকিম ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলেন। গত মঙ্গলবারই তিনি চলে এসেছেন। সকালে তাঁকে চিড়া–মুড়ির খোঁজে তাঁবু থেকে বের হতে দেখা গেল।

বগুড়ার তাঁবুতে জেলা মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কোহিনুর আখতার এসে বসেছেন। তিনি পাশের এক বিএনপি নেত্রীর বাসায় রাতে ছিলেন। সাতসকালেই এসে তাঁবুতে বসেছেন। চায়ের আড্ডায় তিনি কথা বলে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করছেন। তাঁকে ঘিরে ঘুম থেকে যে যে অবস্থায় ছিলেন, উঠে বসেছেন।

জয়পুরহাটের তাঁবুতেও চলছে চিড়া–গুড়ের আয়োজন। এই তাঁবুতে ছিলেন মোতাহার হোসেন। তিনি বললেন, তাঁরা গতকাল উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে এসেছেন। রাতে তাঁবুতে ছিলেন। নাশতা তৈরি হয়নি। তাই হালকা কিছু খেয়ে নিচ্ছেন।

বগুড়া শহর বিএনপির তাঁবুতে তখনো কিছু মানুষ শুয়ে আছেন। আর শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মোর্শেদুল তার অনুসারীদের নিয়ে আড্ডা বসিয়েছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শুনছেন। এই তাঁবুর পাশের রান্নার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। পেঁয়াজ কাটা, আলু কাটা আর মসলা বাটার বড় আয়োজন সেখানে শুরু হয়ে গেছে।

ততক্ষণে এই তাঁবুতে আইয়ুব আলী পুরি আর ডাল নিয়ে বসেছেন। বললেন, খিচুড়ি হতে দেরি আছে। তাঁরা বাইরে থেকে পুরি এনেছেন।

এদিকে একদল নেতা-কর্মী সকালের মিষ্টি রোদে তাঁবুর বাইরে এসে আড্ডা জমিয়েছেন। দোকানপাটও মেলা শুরু হয়ে গেছে। একদল ব্যাজ বিক্রেতা ‘ধানের শীষ, ধানের শীষ’ করে ব্যাজ নিয়ে এর ওর গায়ে লাগানো শুরু করেছেন। আর পুলিশ ঈদগাহ মাঠে ঢোকার প্রধান সড়কটিতে আগের দিনের মতো ব্যারিকেড বসিয়ে দিয়েছে। কোনো যানবাহন সেদিন দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি রিকশাও না। যেতে চাইলে পেছন দিক দিয়ে ঘুরে আসতে হবে।

ফেরার সময় দেখা গেল নগরের সাহেববাজার এলাকায় একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা শাহ মখদুম বিমানবন্দরে যাচ্ছেন। এক যুবক জানালেন, কেন্দ্রীয় নেতা বিমানে আসছেন। তাঁকে আনতে যাচ্ছেন তাঁরা।