জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলা, গ্রেফতার শতাধিক

জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলা, গ্রেফতার শতাধিক

অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, ১০ দফা দাবি আদায় ও আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণমিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর। এ সময় জামায়াত নেতাকর্মীদের লক্ষ্যকরে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন এবং মিছিলে অংশ নেয়া তাদের অনেকে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে জামায়াত।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও গণমিছিলে পুলিশ এ হামলা চালায়। দলটির তরফ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উল্লেখিত হতাহতের দাবি করা হয়েছে।

ওই সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, নাসির উদ্দিন ও জামায়াত নেতা শাহ আলম তুহিন প্রমুখ।

গণমিছিল চলাকালে লক্ষ জনতার পদভারে ও মূহুর্মূহু ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’, ‘এই মহুর্তে দরকার কেয়ারটেকার’, ‘আমিরে জামায়াত জেলে কেন, শেখ হাসিনা জবাব দে’ ইত্যাদি শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত এবং পুরো গণমিছিল উৎসবমখর হয়ে ওঠে।

গণমিছিলটি রামপুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌচাকের কাছাকাছি আসলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ গণমিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সামনে দিকে অগ্রসর হয়ে মালিবাগ হোসাফ সেন্টারের সামনে পৌঁছলে পুলিশ নির্বিচারে রাবার বুলেট ছুঁড়তে শুরু করে। কিন্তু জনতা পুলিশের গুলীবর্ষণ উপেক্ষা করে সামনে দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে রায়টকার এসে তাদের গতিরোধ করে। সে সময় পুলিশ গণমিছিল থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। পুলিশি হামলা আহত হন অসংখ্য নেতাকর্মী।

সমাবেশ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন। এ সময় তিনি দুর্বার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই স্বৈরাচারী, ফ্যাসীবাদী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির পতন ঘটিয়ে জনপ্রতিনিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার করে ভোট ও ভাতের অধিকারসহ গণমানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সেলিম উদ্দিন বলেন, অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণেই আওয়ামী গণতন্ত্র ও রাজনীতির ময়দানকে রীতিমত রঙ্গমঞ্চ বানিয়েছে। আর সরকার দলীয় নেতারা এখন নিজেদের সেই রঙ্গমঞ্চের জোকারে পরিণত হয়েছেন। ফলে তারা এখন জনগণের বিনোদনের অনুসঙ্গ। সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আবারো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন করার জন্য দিবাস্বপ্নে বিভোর। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই তারা নতুন করে বিরোধী দলের ওপর দলন-পীড়ন শুরু করেছে। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও রাজপথে সভা-সভাবেশ প্রত্যেকের নাগরিক সাংবিধানিক অধিকার হলেও সরকার পুলিশ বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে জনগণকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কিন্তু সরকারের যতই জুলুম-নির্যাতন বাড়ছে, ততই রাজপথ উত্তপ্ত ও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। আজকের গণমিছিলে লক্ষ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও গগণবিদারী শ্লোগান সে কথারই প্রমাণ বহন করে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রশাসনকে প্রজাতন্ত্রের প্রতি অনুগত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

তিনি আমিরে জামায়াতের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকার আসন্ন গণঅভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করে নিজেদের নগ্ন, কদর্য ও বিভৎস চেহারা জাতির সামনে উম্মুক্ত করেছে। কিন্তু গ্রেফতার করে, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি; আওয়ামী লীগেরও হবে না। তিনি অপরাজনীতি ও অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা পরিহার করে অবিলম্বে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে আমীরে জামায়াতকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত করবে-ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, সরকারের পায়ের তলা এখন থেকে মাটি সরে গেছে। তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই তাদের শেষ রক্ষা হবে না। মূলত, ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পর তাদের মধ্যে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। তারা এখন পতনাতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন। সে আতঙ্কের অংশ হিসাবে তারা এখন বিদেশী কূটনীতিকদের সাথেও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সরকার সমর্থকদের হাতে নাজেহালের শিকার হয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সম্মানহানী ঘটেছে। তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে আসন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে চায়। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই সফল ও স্বার্থক হতে দেবে না। তিনি ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারকে ইতিহাসের নির্মম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও আদর্শিক রাজনৈতিক দল। জামায়াত সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি, আইন ও সাংবিধানিক শাসনে বিশ্বাসী। সর্বপরি আমরা দুর্নীতি, দুঃশাসন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। ২০১৪ ও ২০১৮ তামাশার নির্বাচন ছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সংসদের জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এমনকি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকারকে আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণ করার আহ্বান জানান। অন্যথায় তাদেরকে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে।

মহানগরী আমির বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে চলমান গণআন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য কথিত নাশকতার কল্পকাহিনী রচনা করতে শুরু করেছে। অথচ ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, অতীতে অগ্নিসন্ত্রাসসহ সকল নাশকতার সাথে আওয়ামী লীগই জড়িত ছিল। তারা জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য দলীয় সন্ত্রাসীদের মাঠে নামানোর অগ্রিম ঘোষণা দিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু জনগণ তাদের সে ষড়যন্ত্র কখনোই সফল ও সার্থক হতে দেবে না বরং অধিকারহারা জনতার উত্তাল জোয়ারে বাকশালীরা খরকুটার মত ভেসে যাবে। তিনি সরকারকে রাজপথে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি বিরত থাকার আহবান জানান। অন্যথায় সৃষ্ট যেকোনো পরিস্থিতির দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।