বিএনপির গণমিছিলে জনতার ঢল, ১১ই জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি

বিএনপির গণমিছিলে জনতার ঢল, ১১ই জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে রাজধানীতে গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও কর্মসূচি পালন করছে। এ কর্মসূচিতে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম হয়। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ঢল নামে গণমিছিলে। পুরো ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের শহরে।

সমাবেশে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গণমিছিলকে ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় ভিড় করেন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন সড়কসহ আশপাশের সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।গণমিছিলকে ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় ভিড় করেন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন সড়কসহ আশপাশের সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর জনসমুদ্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন ও আশপাশের সড়ক। ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী গণমিছিলস্থলে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন তারা। বিকাল সাড়ে তিনটায় গণমিছিলটি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। পরে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলের প্রথম অংশ বিকাল সাড়ে চারটায় মগবাজারে পৌঁছায়। একই সময়ে গণমিছিলের শেষ প্রান্ত ছিল মতিঝিল নটরডেম কলেজ এলাকায়। সন্ধ্যা সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিছিলের শেষ প্রান্ত নয়াপল্টন অতিক্রম করতে পারেনি।

ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে দশ দফা ঘোষণা করেছি। তারই প্রথম কর্মসুচি হলো গণমিছিল। আজকে এসব দফার প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জোট সমর্থন জানিয়েছে। আমাদের দশ দফার মূল হলো-অবিলম্বে গায়ের জোরে টিকে থাকা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে বিএনপির গণসমাবেশ থেকে জনগণ অংশ নিয়ে আওয়াজ তুলেছে অবিলম্বে এই সরকাররে পদত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে আর জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা স্বৈরাচার ও বিশ্বে হাইব্রিড সরকার নামে পরিচিত। এজন্য তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশালী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে। তাদের সাথে জনগণ নেই।

তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকেরা বিদেশে টাকা পাচার করে ব্যাংকগুলো শুন্য করে ফেলেছে। অর্থনীতি ধ্বংসের শেষ সীমানায় চলে গেছে। দেশে বিচারবিভাগ দলীয়করণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের দ্বারা অর্থনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, কোনো স্বৈরাচার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এরশাদ পারেনি, আইয়ুব খান পারেনি। এই আওয়ামী লীগ সরকারও পারবে না। আমি বলবো- এসে দেখে যান বিএনপির সাথে জনগণ আছে কি নেই? আজকে পাড়া মহল্লায় পাহারা দিয়েও জনগণকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। আমরা আমাদের দফা আদায়ে আরো শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবো। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করবো। এই স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করতে হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

রংপুর সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার অনেক বড় বড় কথা বলে। একটা নির্বাচন (রংপুর) দেখেছেন, জামানত বাতিল হয়ে যায় নৌকার। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এটাই অবস্থা। আসলে এই সরকারের সময় শেষ। তিনি বলেন, দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং জনগণ যদি নিজের হাতে নিজের ভোট দিতে পারেন, এই সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না। রংপুর সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার অনেক বড় বড় কথা বলে। একটা নির্বাচন (রংপুর) দেখেছেন, জামানত বাতিল হয়ে যায় নৌকার। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এটাই অবস্থা। আসলে এই সরকারের সময় শেষ। তিনি বলেন, দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং জনগণ যদি নিজের হাতে নিজের ভোট দিতে পারেন, এই সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না। 

তিনি বলেন, অনেকে বলে জনগণ নাকি আমাদের (বিএনপি) সঙ্গে নেই। জনগণ আছে কি নেই, আমি সরকারকে, তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের বলব, আজকের গণমিছিলটা দেখে যান। আগামী দিনে এই জনগণই গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদের বিদায় করবে-তার নমুনা এই গণমিছিল।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা তো বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন। পাহারা দিয়েছেন, কিন্তু জনগণকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেননি।

তিনি বলেন, এই গণমিছিল ১০ দফা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। প্রায় ৩৩টি দল এবং গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি-গোষ্ঠী এর সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ঢাকায় গণমিছিল করছে। এই ১০ দফার একটিই কথা, এই ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ লুটেরা সরকারকে বিদায় করতে হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির ২৪ হাজার নেতা-কর্মী জেলে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি। তারা মনে করেছিল, ১০ ডিসেম্বর আগে মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিএনপির গণসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাবে, হয়নি। যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক, রাস্তায় শুধু আমাদের নেতা-কর্মীরাই নন, জনগণও নেমে গেছে। আর তাদের দাবানো যাবে না।

সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা এ দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট করে, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করে ও দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক ব্যাংকের তারল্য নেই, ডলারের মজুত কমে গেছে, আমদানিকারকেরা এলসি খুলতে পারছেন না। গত ১৪ বছরে এ সরকার যে ঋণ করেছে, এখন তারা ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। অর্থনীতি ধ্বংসের সীমানায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, আজকে জনগণ বুঝতে পেরেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র ফেরত দেবে না। যারা অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে, তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না, যারা বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে, তারা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। তারা সমাজে ভারসাম্য আনতে পারবে না, দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারবে না। 

সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের দিকে মগবাজারে গণমিছিল শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আগামী ১১ই জানুয়ারির জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। আমরা ১০ দফা নিয়ে মাঠে নেমেছি। আসলে দফা একটাই এই সরকারের পদত্যাগ। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। ১৯৭২ সাল থেকে যত খুন হয়েছে আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর বিচার হবে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, এই জনগণকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা কারও নাই। লড়াই আমাদের করতে হবে। সেই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে।

মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন। এর আগে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেনজীর আহমেদ টিটো নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আফরোজা আব্বাস ও হেলেনা জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দল গণমিছিলের প্রথমে ছিল। সবশেষে ছিল মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। মিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, উলামা দল, জাসাস, ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।