দুর্নীতির জন্যই আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে: গয়েশ্বর

দুর্নীতির জন্যই আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে: গয়েশ্বর

আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করার জন্যই ভোট চুরি করে- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তিনি বলেছেন, দুর্নীতি করলে জনগণ ভোট দেয় না।

তাই তাদের ভোট চুরি করতে হয়। এই ভোট চুরির মাধ্যমে তারা দুর্নীতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, এর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।

বুধবার (১৫ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, জনগণের ভোটের অধিকার নেই। দেশে দুটি জিনিসই আমরা শুধু দেখি। একটি হলো ভোট চুরি, আরেকটি হলো দুর্নীতি।

তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারি না। স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি ঠিকই, কিন্তু কথা বলার পর বেঁচে থাকবো কি না সেই নিশ্চয়তা নেই। সত্যি কথা বলার পর কেউ গুম-খুন হয়ে যাবে কি না, অপহরণের শিকার হবে কি না- সেই নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশ চলবে কোন পথে, সেই ফয়সালা রাজপথে হবে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আমাদের ঘরে নয়, বাইরে আন্দোলনে জিততে হবে। আমরা যে আন্দোলনে আছি, তাকে সফল করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে আমদানি, রপ্তানি থেকে শুরু করে উৎপাদমুখী শিল্প কারখানা কোনো কিছুতেই স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। কারণ ব্যাংক নিয়মিত নিয়ম অনুযায়ী টাকা দিতে পারে না। তারা (ব্যাংক) অনিয়মের টাকা এত বেশি দিয়ে ফেলছে যে, এখন নিয়মমাফিক টাকা দিতে পারে না। গত তিন মাসে দুই-তিনটি ব্যাংক থেকে ৬৯ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। এত টাকা যদি বিদেশে চলে যায়, তাহলে ব্যাংকগুলোর আজকের আর্থিক অবস্থা কী? তারা ব্যবসায়ীদের কি দেবে?

গয়েশ্বর বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ ছিল মেগা দুর্নীতির একটি ক্ষেত্র, একটি প্রক্রিয়া। দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে, সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি চালু থাকে, তাহলে আমাদের বিদ্যুতের সমস্যা থাকে না। কিন্তু সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ। তবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি ট্র্যাক্স প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজন্য সরকার ফটকা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মাসে ২৭৯ কোটি ডলার গচ্ছা দিচ্ছে।

আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তা থেকে ৬০ শতাংশ বেশি দাম রাখে আদানি। তাই আদানির থেকে ভারতের কোনো কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনে না। অথচ সেই আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে। বিদ্যুৎ খাত থেকে লুটপাটের যে প্রক্রিয়া, এটা আগে থেকে শুরু হয়েছে, এখনো চলমান।

তিনি বলেন, দেশে যে দুর্নীতি চলছে, এর লাগাম টেনে ধরতে হলে আমাদের মরণ কামড় দিতে হবে। কোনো আপস নেই। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে, দিনের ভোট দিনে দিতে পারবে- এই ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে থেকে যেন নির্বাচন নামক কোনো কথা আমাদের (বিএনপি) মধ্য থেকে না আসে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে হাসিনা ছাড়া অন্যরা জয়লাভ করবে, এমন ভাবার মতো মূর্খ লোক তো দেশে থাকার কথা না। সুতরাং আমাদের সব সমস্যার সমাধান শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আমরা শুধু সাইফুল আলম নীরবের মুক্তি নয়, আমরা ১৮ কোটি মানুষের মুক্তি চাই। এই ১৮ কোটি মানুষের মুক্তি হলেই জ্ঞাত-অজ্ঞাত সবার মুক্তি হবে। আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, কারাগারে আটক এস এম জাহাঙ্গীর মুক্তি পাবেন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।