সরকারের সময় শেষ: বিএনপি মহাসচিব

সরকারের সময় শেষ: বিএনপি মহাসচিব

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি দেশের মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ মানুষের ওপর জুলুম করছে। তবে তাদের সময় এখন শেষ। জনগণ তাদের আর কোনো সময় দিতে চায় না।

বুধবার বেলা ৩টায় নগরের কাজীর দেউড়ির মোড়ে বিএনপি’র অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ‘তারা বলে আমরা ভয় পাই না। এখন এমন ভয় পেয়েছে হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। তাদের সব কিছু তো বিদেশে। টাকা পাচার করেছে বিদেশে। এইবার যদি তুমি ভোটে আবার কারচুপি করতে যাও, এবার যদি দিনের ভোট রাতে করো। তাহলে তোমার রেহাই নাই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এ দেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। এ দেশে নাকি সুস্থ ভোট হয়। অনেক হয়েছে, আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে, সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। মিথ্যা আর গায়েবি মামলা দিয়ে হাজির করা হয়। এরপর হাইকোর্টে যাই, আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে আবার জেলে পাঠানো হয়। সেটাই শেষ না, জামিন নিয়ে বের হলে আবার মামলা দেয়া হয়। সাংবাদিকরা লিখলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল আইনে মামলা করা হচ্ছে। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আবার মামলা দেয়া হচ্ছে। ফটোগ্রাফার শহিদুল ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনিকে বাড়ির মধ্যে নির্মমভাবে হত্যার এখনো বিচার হয়নি। আর তারা জনগণের টাকা দিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না। আজকে আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। পার্লামেন্টকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে। বরিশালের পীর সাহেব একজন আলেম মানুষ। তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে। শেষ পর্যন্ত তাকেও মেরে রক্তপাত ঘটিয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। শুধু আটক করে রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে কারাগারে অনেক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। বার বার বলেছি, তাকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না, তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। বিএনপি’র প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে এই অবৈধ সরকার। আজ ১৮ কোটি মানুষ বিএনপি’র দিকে তাকিয়ে আছে। ভোটাধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবাধিকার, সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে এই অবৈধ  সরকার হটানোর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এদেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করে ১৭ জন যুবদল- ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন এই স্বৈরাচারী সরকারের  আমলে। পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।’

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই ভোটবিহীন অবৈধ সরকারের গেইম ওভার। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া আওয়ামী লীগকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা জনগণের ওপর নেই, তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের একাংশের ওপর। এই একাংশ এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেআইনি কাজ করছেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ও সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। 

এই একাংশের কাছে অনুরোধ এই পথ থেকে সরে আসেন। দেশের জনগণ জেগেছে। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বক্তব্য রাখেন।