সচল হচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের মামলা

সচল হচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের মামলা

প্রায় এক দশক আগের অন্তত ৪০টি মামলা সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এই মামলাগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখনো ‘স্থগিত'। এসব মামলার বেশির ভাগই ২০১৪-র জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং কিছু মামলা পরে হয়েছিল।

বেশির ভাগ মামলায় আসামি বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতা। মামলাগুলোকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিতে রাজি নন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-র কমিশনার খন্দকার ফারুক হোসেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, 'এগুলো সব ফৌজদারি মামলা। মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। কোনো মামলা তো আর দীর্ঘদিন ধরে পেন্ডিং থাকতে পারে না। ফলে আমরা মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরকেও আমরা জানিয়েছি, যাতে মামলাগুলো সচল করা যায়।'

পুলিশ সদর দফতর থেকে সম্প্রতি এই মামলাগুলো সচল করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে যোগাযোগ বা চিঠি পাঠিয়ে এসব মামলা সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আসামি হিসেবে আছেন।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া এ রকম ২৫টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি এই মামলাগুলো সচল করতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের উচ্চ আদালতে আবেদন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ডিএমপি সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) শচীন চাকমার সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আপনার বিভাগের আওতাধীন ফৌজদারি মামলার বিচার/তদন্ত কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা মামলাগুলো চালু করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলো।'

ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'যে মামলাগুলো আদালতের আদেশে স্থগিত আছে, সেই মামলাগুলোর তদন্ত শুরুর জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে আমরা চিঠি লিখেছি। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছেও চিঠি দিয়েছি।'

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, যে ৪০টি মামলা সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে ডিএমপির ২৫টি মামলা। এই ২৫টির মধ্যে ১৫টি মামলাই দায়ের করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে। বাকি ১০টি মামলা দায়ের করা হয় নির্বাচনের পর অর্থাৎ ২০১৫ সালে। তদন্ত শুরু করতে চাওয়া সর্বোচ্চ ছয়টি মামলা রয়েছে পল্টন থানায়। মুগদা ও খিলগাঁও থানায় চারটি করে মোট আটটি এবং যাত্রাবাড়ী থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া রমনা, মতিঝিল, ডেমরা ও সবুজবাগ থানায় দুটি করে মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ছয়টি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসামি হিসেবে রয়েছেন। একটি মামলায় খালেদা জিয়াও আসামি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকা এই মামলার আসামিরা হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বরকত উল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান ও সালাহউদ্দিন আহম্মেদসহ ৩৮ জন। এছাড়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চাওয়া ২০১৩ সালে রমনা থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় দাঙ্গা, সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা, সরকারি কর্মকর্তার ওপর বলপ্রয়োগ ও বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ ১৬ জন নেতা।

এসব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'শুধু পুলিশের অনুরোধে নয়, আমরা পুরনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে যেগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে, সেগুলো সচল করতে আবেদন করেছি। কয়েকটি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক বিষয় নয়, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এগুলো করা হচ্ছে।'

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলায় জামায়াত নেতা ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ও শামীম সাঈদীসহ ১১১ জন আসামি রয়েছেন। জানা গেছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি স্থগিত স্থগিত রয়েছে।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমাদের কানে এসেছে যে সাড়ে ১৩ শ' মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলাগুলো নির্বাচনের আগেই শুনানি শেষ করে সাজা দিয়ে দেয়া হবে। সবগুলোই রাজনৈতিক মামলা এবং আসামি হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা। অত্যন্ত চমৎকার উদ্দেশ্য। বিএনপি নেতাদের যদি মামলায় আটকে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তাদের (আওয়ামী লীগের) কথা মতো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) সংবিধান তৈরি করেছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী, তারা একা একা খেলবেন, গোল দিয়ে যাবেন। প্রতিপক্ষ কেউ মাঠে থাকবেন না।'

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'এসবই করা হচ্ছে সরকারের নীল নকশার অংশ হিসেবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে কোন মামলা স্থগিত থাকলে সেটা দেখার দায়িত্ব তো অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের। পুলিশের তো এখানে কোন ভূমিকা নেই। আমার মনে হয়, অতিউৎসাহী হয়ে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি বলব না পুলিশের সবাই এর সঙ্গে যুক্ত। অতিউৎসাহী কেউ কেউ এটা করছে। আসলে সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা এসব করে পুলিশ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে।' সূত্র : ডয়চে ভেলে