রাজবাড়ী পথসভায় খসরু

রোডমার্চ থেকেই ফয়সালা

রোডমার্চ থেকেই ফয়সালা

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমেছে। এই রোডমার্চ থেকেই ফয়সালা করে বাড়ি ফিরে যাবো।

মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ মোড়ে রোডমার্চপূর্ব পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভা শেষে বেলা ১২টা ১৮ মিনিটে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রোডমার্চের গাড়ি ছাড়ে। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তা উপেক্ষা করেই হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চে অংশ নিয়েছেন।

'সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে’ এই রোডমার্চের আয়োজন করে দলটি।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। হাজার হাজার মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর লক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।

আজকে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের উপর চেপে বসেছে।

খসরু বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে সরানোর জন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের (সরকার) ভয় বেগম খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকেন তাহলে এই অবৈধ সরকারের টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর এটাকে সরকার বলা যায় না। এটা রেজিম তৈরি করেছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই সরকারের পতনের বেশি দেরি নাই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আরেকটু এগিয়ে যেতে হবে। এখন ডাক আসবে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতন ঘটাবো আমরা। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

এরপরে রাজবাড়ী সদর থানার বসন্তপুর মাঠে দ্বিতীয় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রোডমার্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। রোডমার্চটি রাজবাড়ী গোয়ালন্দ মোড় থেকে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর হয়ে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে।

রোডমার্চে রড দিয়ে ঘেরা জেল খানার আদলে তৈরি খাঁচার মধ্যে একটি শিশু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতো সাজগোজ করে বসে আছে। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সকল নেতাকর্মীদের আকর্ষণ করছে শিশুটি।

এই রোডমার্চে বেশ কয়েকটি পথসভা করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদর থানার বসন্তপুর মাঠ, ফরিদপুর সদরের রাজবাড়ী মোড়, নগরকান্দার তালমা মোড়, গোপালগঞ্জের মকসদপুরের বরইতলা, মাদারীপুরের মস্তফাপুর পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হবে।

ইতিমধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রোডমার্চ। নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। ট্রাক, মাইক্রোবাস ছাড়াও কয়েক শত মোটরসাইকেল নিয়ে যোগ দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। মাথায় ব্যান্ড, ক্যাপ পড়ে, রং-বে রঙয়ের গেঞ্জি গায়ে এবং হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী রোডমার্চে অংশ নিয়েছেন। এসময় তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

রোডমার্চের দলনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুকের সভাপতিত্বে এবং রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিমের পিন্টুর সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি নেতা বেগম সেলিমা রহমান, শামা ওবায়েদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, নাসিরুল হক সাবু, মো. আসলাম মিয়া, হারুন অর রশীদ হারুন, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এস এম জিলানী, রাজিব আহসান, ছাত্রদল নেতা রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সরকার পতনে একদফার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বর্তমানে ১৫ দিনের কর্মসূচি করছে বিএনপি। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ কর্মসূচি ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।