দিল্লি আছে, আমরাও আছি: কাদের

দিল্লি আছে, আমরাও আছি: কাদের

তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই৷ যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’ 

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে৷ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে ধামরাই, সাভার, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ মোট সাত উপজেলার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন বলে মঞ্চ থেকে জানানো হয়। 

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তাদের সবার বক্তব্যই ছিল আগামী নির্বাচন ও বিরোধীদের একদফার আন্দোলনকেন্দ্রিক। ‘খেলা শুরু’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে নেতারা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দেন৷ 

সমাবেশের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্য শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ তুলে। তিনি বলেন, দুই সেলফিতেই বাজিমাত৷ এক সেলফি দিল্লি, আরেক সেলফি নিউইয়র্কে। শেখ হাসিনা আর পুতুল, জো বাইডেনের সেলফিতে দিল্লিতে বাজিমাত। তারপর নিউইয়র্কে বাজিমাত। কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি।’

তলে তলে আপস হয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, আমেরিকার দিল্লিকে দরকার৷ আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শত্রুতা কারও সঙ্গে নাই, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই৷ যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।’
ভিসা নীতির ধমকি-ধামকি শেষ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভিসা নীতির পরোয়া করি না৷ আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তাহলে কেন ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। ফখরুলের (বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) গলার আওয়াজ নরম হয়ে গেছে।’

বিএনপি নেতারা এখন পথ হারিয়ে দিশেহারা মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির দম ফুরিয়ে গেছে৷ বিএনপির কত হুমকি। এখন অক্টোবর চলে যাচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বুড়িগঙ্গায় পরে গেছে। নির্বাচন ছাড়া জনগণ এই মুহূর্তে আর কিছুই চায় না। এখন ভোট হলে শতকরা ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে৷

অক্টোবর থেকে খেলা শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে সেমিফাইনাল। জানুয়ারিতে ফাইনাল। বিএনপি এখন ফাউল করছে। ফাউল করলেই হলুদ কার্ড, লাল কার্ড। ফাউল করা চলবে না। ফাইনাল খেলার জন্য তৈরি হয়ে যান। অক্টোবরে নাকি সরকারের পতন। কোন বছরের অক্টোবরে? নভেম্বরে-ডিসেম্বরেও কিছুই হবে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মতো হাঁটু ভাঙা, কোমর ভাঙা দল ফাইনাল খেলতে পারবে না। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোমর সোজা করে তৈরি হয়ে যান। কৌশল ভালো করে বুঝে নেন। সাংঘাতিক খেলা হবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ বুঝে গেছে, বিএনপির লাফালাফিতে জনগণের লাভ নাই৷ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্রকে গিলে খাবে, দুর্নীতি-লুটপাট করবে। কোনোভাবে ক্ষমতায় বসা গেলেই হাওয়া ভবনের খাওয়া শুরু হবে। দুর্নীতির গন্ধ আছে যেই দলের গায়ে সেই দলকে জনগণ চায় না।

বিএনপিই খালেদা জিয়ার মামলা ঝুলিয়ে রেখেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেন না খালেদা জিয়া। এত দিনে খালেদা জিয়ার মামলার ফয়সালা হয়ে যেত, হয়তো মুক্তিও মিলত৷ বিএনপির কারণেই মামলার ফয়সালা হয়নি৷

বাজারে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগেই জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম চলে আসবে। চিন্তা করবেন না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর আসবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মানুষ ভিসা নীতি পরোয়া করে না। কারও চোখ রাঙানিতে ভয় নেই। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া ঢাকা জেলার নেতারাও বক্তব্য দেন। সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান।