এক টেস্টে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস হল না লাবুশেনের

এক টেস্টে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস হল না লাবুশেনের

ইতিহাসের মাত্র অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরির ইতিহাস ডাকছিল মার্নাস লাবুশেনকে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান এগোচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু ফিফটির পরে আউট হলে বিরল রেকর্ডের পাতা অধরাই থেকে গেছে ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যানের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক তুলে নিয়েছিলেন লাবুশেন। অ্যাস্টলকে ফিরতি ক্যাচ দেয়ার আগে করে যান ২১৫ রান। ১৯ চার ও এক ছক্কায় ৩৬৩ বলের ইনিংস।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে করা ৪৫৪ রানের জবাবে ২৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংস থেকেই ১৯৮ রানের বড় লিড। সোমবার চতুর্থদিনে এসে রান তোলার তাড়া ছিল অজিদের। দ্রুত কিছু রান তুলে বোঝা চাপিয়ে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর হিসাব ছিল।

দ্রুত রান তোলার এই তাড়াটাই হয়ত কাল হল লাবুশেনের! রেকর্ডের অপেক্ষায় থেকে স্বাগতিকরা অবশ্য ইনিংস ঘোষণা করতে বিলম্ব করছিল। কিন্তু আর কতক্ষণ। অন্তত পাঁচ সেশন হাতে রেখে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে পাঠাতে লাবুশেনকে প্রায় প্রতি বলেই চালিয়ে খেলতে হচ্ছিল! তাতে তড়িঘড়ি, টেস্ট মেজাজটা দেখাতে পারলেন না, ৫৯ করে তিনি আউট হতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক টিম পেইন।

নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ জিততে বা বাঁচাতে তাড়া করতে হচ্ছে ৪১৬ রান। যে ভিতটা গড়ে দেয়ার পথে লাবুশেন ফিফটি ও ডেভিড ওয়ার্নার সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ৩ চারে ঝটপট ৭৪ বলে ৫৯ তোলা লাবুশেন হেনরির বলে ল্যাথামকে ক্যাচ দিয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে অনেকটা দূরেই ফিরেছেন।

ওয়ার্নারকে ফেরাতে পারেনি কিউইরা। সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের ২৪তম শতক তুলে নেয়া বাঁহাতি ওপেনার ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন। ৯ চারে ১৫৯ রানের ইনিংস। উদ্বোধনীতে জো বার্নসকে (৪০) নিয়ে ১০৭ এবং পরে লাবুশেনকে নিয়ে ১১০ রানের জুটি গড়েছেন ওয়ার্নার। লাবুশেন আউট হতেই ইনিংস ঘোষণা করেছে স্বাগতিকরা।

ক্যারিয়ারের মাত্র ১৪তম টেস্ট খেলতে নেমেছেন লাবুশেন। দেড় হাজার রানের কাছে পৌঁছে গেছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৪ সেঞ্চুরির সাথে ৮ ফিফটি যোগ করে ফেলেছেন নামের পাশে। যার একটি ডাবল সেঞ্চুরি, এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে করা। সেই ডাবলের পিঠে আরেকটি সেঞ্চুরি গড়লেই হত ইতিহাস।

এক টেস্টে সেঞ্চুরি-ডাবল/ট্রিপল সেঞ্চুরির ইতিহাস যাদের
বিরল যে রেকর্ড শতবর্ষ পেরিয়ে আছে কেবল সাত ব্যাটসম্যানের। একই টেস্টে শতক ও দ্বিশতকের প্রথম কীর্তিটি ডাগ ওয়াল্টারের। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ৭৪ টেস্ট খেলার পথে ১৫ সেঞ্চুরি আছে তার। যার দুটি এসেছিল এই সিডনিতেই, ১৯৬৯ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৪২ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৩ রান।

বিরল এই কীর্তির দ্বিতীয়বার দেখা মেলে সুনীল গাভাস্কারের হাত ধরে। ভারতীয় কিংবদন্তি ১৯৭১ সালে সেই উইন্ডিজের বিপক্ষেই পোর্ট অব স্পেন টেস্টে করেছিলেন ১২৪ ও ২২০ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের লরেন্স জর্জ রোয়ি ১৯৭২ সালে কিংসটোন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিক ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন।

রেকর্ডের তালিকায় চতুর্থজন আরেক অস্ট্রেলিয়ান, গ্রেগ চ্যাপেল। ১৯৭৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪৭ রানে অপরাজিত থাকার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করে যান ১৩৩ রান। ওই টেস্টেই তার সহোদর ইয়ান চ্যাপেল দুই ইনিংসে করেছিলেন যথাক্রমে ১৪৫ ও ১২১ রান।

সেঞ্চুরি ও ডাবলের পরের কীর্তিটি আরও খানিকটা বেশি বিরল ইতিহাস। কেননা ইতিহাস যে প্রথমবার দেখে একই টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির মাইলফলক। ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ ১৯৯০ সালে লর্ডস টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রানে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১২৩ রান।

পরেরজন ব্রায়ান চার্লস লারা, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাঁহাতি কিংবদন্তি ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ২২১ ও ১৩০ রান করে ফেরেন। সেই শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার মাধ্যমে এসেছে বিরলের বিরল রেকর্ডের শেষটি, যাতে প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। লঙ্কান বাঁহাতি ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৩১৯ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রান করে ফেরার আগে যথেচ্ছ ভুগিয়ে যান টাইগার বোলারদের।

লাবুশেনের এই বিরল কীর্তিমানদের পাশে নাম লেখানো হল না সিডনি টেস্টে!

এমজে/