ডারবানে শেষ দিনের অপেক্ষা

ডারবানে শেষ দিনের অপেক্ষা

ডারবানে টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশর প্রধান লক্ষ্য ছিল যত অল্প রানে সম্ভব দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামানো। প্রথম সেশনের হতাশা বাদ দিলে সেই কাজ ভালোভাবেই করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়েছেন ২০৪ রানে। কিন্তু প্রথম ইনিংসে লিড থাকায় প্রোটিয়াদের পুঁজি দাঁড়িয়েছে ২৭৪ রানে। এবার জিততে হলে এই রানই টপকাতে হবে বাংলাদেশকে।

আজ দিনের সেশনে অবশ্য রান টপকানোর লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আলোর স্বল্পতায় দিনের পুরো খেলা মাঠে গড়ায়নি।

যতটুকু সময় ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ তাতে হতাশা ছাড়া কিছু মিলেনি। ২৭৪ রান তাড়ায় নেমে স্কোরবোর্ডে ৮ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। একে একে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। দিন শেষে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১১ রান। জয়ের জন্য আগামীকাল সোমবার শেষ দিন বাংলাদেশকে করতে হবে ২৬৩ রান। অন্ততপক্ষে ম্যাচ বাঁচাতে হলেও টিকে থাকতে হবে পুরোদিন।

উপমহাদেশের দলগুলোর ইতিহাস বলছে ডারবানে জয় কঠিন কিছু নয়। কারণ এশিয়ার সবগুলো দলের ডারবানের কিংসমিডে জয় আছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রত্যেকে হারিয়েছে স্বাগতিকদের। এবার বাংলাদেশ সেটা করতে পারে কি না সেটাই দেখার।

প্রথম সেশন

আজ চতুর্থ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্রুত অলআউট করার লক্ষ্যে মাঠে নামে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে সেই লক্ষ্যের ছিটেফোটাও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং শুরুর সেশনেই বোলিংয়ে বেশি ভুগেছে সফরকারীরা। দুই স্বাগতিক ওপেনার ডিন এলগার সারেল এরউই বাংলাদেশকে ভোগান। অবশেষে এই সেশনে শুধু এইউয়ের উইকেটই শুধু নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তরুণ পেসার ইবাদতের বলে এলিবিডব্লিউ হয়ে হয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৫১ বল খেলে ৮ রান করেন তিনি। এই সেশনে এই একটি উইকেট নিয়েই লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। মোট ২৯ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা এই সেশনে তোলে ৯৯ রান।

দ্বিতীয় সেশন

প্রথম সেশনের চেয়ে দ্বিতীয় সেশন অনেক ভালো করেছে বাংলাদেশ। এই সেশনেই জমে যাওয়া ডিন এলগারের প্রতিরোধ থামান তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলে এলবির ফাঁদে পড়েন এলগার। যদিও আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে এলগারকে মাঠছাড়া করে বাংলাদেশ। ১০২ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।

অধিনায়ককে ফেরার কিছুক্ষণের মাথায় আরও দুটি উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। পরপর কিগান পিটারসেন ও তেম্বা বাভুমাকে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইবাদত হোসেন। পিটারসেনকে ব্যক্তিগত ৩৬ রানের মাথায় বিদায় করেন মিরাজ। এর পরই তেম্বাকে ফিরিয়ে দেন ইবাদত। ২২ বলে ৪ রান করে বিদায় নেন তেম্বা বাভুমা।

ক্যারিবীয়দের পঞ্চম উইকেটও তুলে নেন মিরাজ। বাংলাদেশি অফ স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন কাইল ভেরেইনা। ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল লাগে জুতায়। এরপর গ্লাভস ছুঁয়ে ক্যাচ উঠে যায়। ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান সাদমান ইসলাম। ১ চারে ১৮ বলে ছয় রান করেন ভেরেইনা। দ্বিতীয় সেশনে মোট ৪ উইকেট তুলে নিয়ে মোটামুটি স্বস্তি দেন বোলাররা। তবে রানের চাপ বাড়ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। যেটা তৃতীয় সেশনেও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের।

তৃতীয় সেশন

তৃতীয় সেশনে বাকি উইকেটগুলো তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের ২০৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম ইনিংসে তাদের লিড ছিল ৬৯। সবমিলে বাংলাদেশকে ২৭৪ রানের লক্ষ্য দেয় ডিন এলগারের দল। এই রান তাড়ায় নেমে তিন উইকেট হারিয়ে ১১ রানে দিন শেষ করে মুমিনুল হকের দল।

এর আগে প্রথম দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬৭ রানে থামায় মুমিনুল হকের দল। বিপরীতে প্রথম ইনিংসে ২৯৮ রান করেছে বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। তিনি খেলেছেন ১৩৭ রানের ইনিংস। ৩২৬ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ১৫টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান করেছেন লিটন দাস। এখন টেস্টের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে আগামীকাল শেষ দিনের ওপর। কাল সোমবার জিততে হলে প্রোটিয়ারদের দেওয়া রান তাড়া করতে হবে বাংলাদেশকে। নয়তো অন্তত ম্যাচ বাঁচাতে হলেও পুরো দিন টিকে থাকতে হবে মুমিনুল হকের দলকে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কতটা সফল হয় সেটা সময় বলে দেবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস : ১২১ ওভারে ৩৬৭/১০ (এলগার ৬৭, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৯, রিকলটন ২১, তেম্বা ৯৩, কাইল ২৮, উইয়ান ০, কেশব ১৯, সিমন ৩৮, উইলিয়ামস ১২, অলিভার ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩, খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮/১০ (সাদমান ৯, মাহমুদুল ১৩৭, নাজমুল ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ০, ইয়াসির ২২, লিটন ৪১, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০; হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, অলিভার ১৫-৫-৩৬-১, কেশব ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস : ৭৪ ওভারে ২০৪/১০ (এরউই ৮, এলগার ৬৪, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, রিকলটন ৩৯, কেশব ৫, সিমন ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভার ০ ; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, টাসকিন ১১-১-২৪-২, ইবাদত ১৩-১-৪০-৩)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৬ ওভারে ১১/৩ (সাদমান ০, জয় ৪, মুমিনুল ২, মুশফিক ০*, শান্ত ৫*; কেশব ৩-০-৭-২, সিমন ৩-১-৪-১)।