ডেনমার্ককে রুখে দিল তিউনিসিয়া

ডেনমার্ককে রুখে দিল তিউনিসিয়া

ইউরোয় গত বছর নিজেদের প্রথম ম্যাচে কী এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল ডেনমার্ককে। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। অধিনায়ক সাইমন কিয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর না দিলে এ ভুবনে আর ফিরিয়ে আনা যেত না এরিকসেনকে।

ফিনিশদের বিপক্ষে আকস্মিক ওই ধাক্কা সেদিন কাটিয়ে উঠতে পারেনি ডেনমার্ক। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রতিবেশীর কাছে ম্যাচটা হেরেই বসেছিল তাঁরা।

বিশ্বকাপে আজ অবশ্য নিজেদের প্রথম ম্যাচে কোনো অঘটন-অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাক্ষী হতে হয়নি ডেনমার্ককে। তবে দিনটা নিজেদেরও করতে নিতে পারেনি। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের ম্যাচে ডেনিশদের রুখে দিয়েছে তিউনিসিয়া।

আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। বাছাই পর্বে দাপট দেখিয়েই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিল ডেনমার্ক। ইউরোর সেমিফাইনালে খেলা কাসপার হিউলমান্দের দলটিকে অনেক ফুটবলবোদ্ধা সবচেয়ে সুসংগঠিত বলেছিলেন। সেই দলটির সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা তিউনিসিয়ানদের কাছে জয়ের সমতুল্য নয় তো কী!

পছন্দের ৩-৫-২ ছকেই একাদশ সাজিয়েছিলেন ডেনিশ কোচ হিউলমান্দ। তবে আক্রমণভাগে ইউসুফ পুলসেন-মার্টিন ব্রাথওয়েটদের না রেখে খেলিয়েছেন কাসপার ডোলবার্গকে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন উইঙ্গার আন্দ্রেয়াস স্কোভ ওলসেন। ডেনিশরা ম্যাচজুড়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছে উইং ধরেই।

কিক অফের পর থেকেই তিউনিসিয়াকে চেপে ধরার চেষ্টা করে ডেনমার্ক। প্রথম মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেন ‘প্রাণভোমরা’ এরিকসেন। যেটি নিজেই নিতে যান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা। একটু পরেই তাঁকে ট্যাকল করে গ্যালারিতে থাকা নিজেদের সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে হুংকার দেন আইসা লাইদুনি। তিউনিসিয়ানদের জাগিয়ে তুলতে আর কী চাই! ডেনমার্ককে রুখে দেওয়ার পথে তাঁদের লড়াকু মনোভাব এভাবেই ফুটে উঠেছে।

শুরুর ওই আক্রমণের পর ডেনমার্ক কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে লাইদুনির ওই শরীরী সাহস দেখানোর পর। সেই সুযোগে পাল্টা আক্রমণে যায় তিউনিসিয়া। ম্যাচের প্রথম বলার মতো সুযোগ সৃষ্টি করে আফ্রিকার দলটিই। ১১ মিনিট মোহাম্মদ দ্রাগার দূরপাল্লার শট বার্সেলোনা তারকা আন্দ্রেয়াস ক্রিসটেনসেনের গায়ে লেগে দিক না পাল্টালে এগিয়ে যেতে পারত তিউনিসিয়া।

২০ মিনিটে বড় সুযোগ পেয়েছিল ডেনমার্ক। ইওয়াকিম ম্যালের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় তিউনিসিয়ার চোয়ালবদ্ধ ডিফেন্স। প্রথম আধঘণ্টায় ডেনিশরা বেশির ভাগ আক্রমণ করেছে ডান উইং দিয়ে। ‘ডেডলক’ ভাঙতে না পারায় পরিকল্পনা বদলে বাঁ উইং ধরে এগোতে থাকে। পরিবর্তন আসে ফ্রি কিকের সে ক্ষেত্রেও। প্রথমার্ধে কর্নারগুলো এরিকসেন নিলেও ফ্রি কিকগুলো নেন ওলসেন। কিন্তু গোল বন্ধ্যত্ব আর কাটেনি।

৩৯ মিনিটে বরং কর্নার থেকে পাওয়া সুযোগে প্রায় এগিয়েই গিয়েছিল তিউনিসিয়া। পাদপ্রদীপের আলোয় আবার সেই লাইদুনি। ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে দেখে মনে হতে পারে পুরোনো নেদারল্যান্ডসের ‘টোটাল ফুটবল’ ফিরিয়ে এনেছেন। নিজেদের বক্স থেকে প্রতিপক্ষের বক্স—মাঠের কোথায় ছিলেন না তিনি!

৪৩ মিনিটে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে নেওয়া শট ডেনিশ গোলরক্ষক কাসপার স্মাইকেল ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচের নায়কই বনে যেতেন লাইদুনি। বিরতির আগমুহূর্তে ডেনমার্কের আক্রমণ এরিকসেনের সৌজন্যে। এবার তাঁকে থামান ইয়াসিন মেরিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের শুরুটা করে তিউনিসিয়া। একের পর পর কর্নার আদায় করে ডেনিশ ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত রাখে তারা। গোলবারের পেছনের গ্যালারিতে থাকা সমর্থকদের গগনবিদারী চিৎকার জালেল কাদরির শিষ্যদের আত্মবিশ্বাসের পালে যেন হাওয়া দেয়। লাইদুনি আর দ্রাগার কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন ডেনিশদের। তবে সে পরীক্ষায় উতরে যায় হিউমান্দ শিষ্যরা।

৬৯ মিনিটে এরিকসেনের দূরপাল্লার শট মেরিয়া যেভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেন, তাতে তাঁর মাথায় সতীর্থ গোলরক্ষক আইমেন দাহমেন চুম্বন না করে পারেননি।

এরপর ডেনমার্কের হয়ে বলতে গেলে একাই লড়েছেন এরিকসেন। একাই চার-চারটি সুযোগ তৈরি করেছেন ‘মৃত্যুর দুয়ার’ থেকে ফিরে আসা তারকা, যা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু ভাগ্য আজ তাঁকে সঙ্গ দেয়নি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকেও পাশে পাননি। নয়তো কি আর টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট হ্যান্ডবল ধরা পড়লেও পেনাল্টি দেন না রেফারি!

অতিরিক্ত সময়ে শেষ কামড়টা প্রায় দিয়েই ফেলেছিল ডেনমার্ক। তিউনিসিয়ার ডিফেন্ডার মেরিয়ার কাঁধে লেগে বল স্পর্শ করে তাঁর হাতে। ভিএআর চেক করার পর মনিটরে সেই মুহূর্তের দৃশ্য দেখেও পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি মেক্সিকান রেফারি সেজার রামোস। হতাশা নিয়েই তাই মাঠ ছাড়তে হয় ডেনমার্ককে।