নিউজিল্যান্ডে সিরিজ জেতা হলো না টাইগারদের

নিউজিল্যান্ডে সিরিজ জেতা হলো না টাইগারদের

স্বল্প পুঁজি নিয়েই লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন বোলাররা। জাগিয়ে তুলেছিলেন অবিশ্বাস্য কিছুর সম্ভাবনা। স্বপ্ন বাঁধতে শুরু করেন সমর্থকেরা। তবে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি, চেষ্টা করেও শরিফুল-মেহেদিরা পেরে উঠেননি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের অপেক্ষা দীর্ঘ হলো বাংলাদেশের।

রোববার ভোর ৬টায় সিরিজ নির্ধারণী শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। তবে কিউই বোলারদের তোপের মুখে বাংলাদেশ গুঁটিয়ে যায় ১৯.২ ওভারে মাত্র ১১০ রানে। জবাবে ১৪.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৯৫ রান তুলতেই বৃষ্টি নামে বে ওভালে। ফলে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নিউজিল্যান্ডকে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এই প্রথম কোনো সিরিজ জয়ের হাতছানি ছিল টাইগারদের সামনে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জয়ের পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই নিশ্চিত হতে পারতো সিরিজ। কিন্তু বৃষ্টিতে বাড়ে অপেক্ষা, ম্যাচ হয় পণ্ড। আর আজ শেষ টি-টোয়েন্টিতে হেরে যাওয়ায় ১-১ সমতাতেই শেষ হলো সিরিজ।

বোলাররা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন বটে। ১১১ রানের ছোট লক্ষ্যটাও কঠিন করে তুলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের জন্যে। শেখ মেহেদী আর শরিফুলে চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকে কিউইরা। ৪৮ রানে তাদের ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। যেখানে চারজনই আউট হন মাত্র ১ রান করে। ৩১ বলে ৩৮ রান করেন ফিন এলেন।

দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম আঘাত আনেন শেখ মেহেদী। ফেরান টিম সেইফার্টকে। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে ৩ বলে ১ রানে আউট হন বিধ্বংসী এই ব্যাটার। সমান ১ রানে ফেরেন ডেরিয়েল মিচেলও; তাকেও ফেরান মেহেদী। ৫ বলে ১ রান করে শান্তকে ক্যাচ দেন তিনি।

১ রানের গণ্ডি পাড়ি দিতে পারেননি গ্লেন ফিলিপসও। তবে এবার শিকারী ভিন্ন। শরিফুল ইসলামের বলে ৪ বলে ১ রান করে স্ট্যাম্প ভাঙে তার। একই পরিণতি মার্ক চাপম্যানেরও। তবে তিনি ফেরেন রান আউট হয়ে। ৫ বলে ১ রান আসে তার ব্যাটে। ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারায় কিউইরা।

তবে একপ্রান্ত আগলে ইনিংস টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন এলেন। বারবার সাথী বদল হলেও অপরিবর্তিত রূপে থকেন তিনি। হয়ে উঠেন গলার কাঁটা। অবশেষে ৮.৩ ওভারের মাথায় তাকে ফেরান শরিফুল। ৩১ বলে ৩৮ রান করে বোল্ড হন তিনি। ৪৮ রানে ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

এলেনের বিদায়ের পর হাল ধরেন জিমি নিশাম। অধিনায়ক সান্টনারকে সাথে নিয়ে ৩৮* রানের অপরাজিত জুটি গড়ে সামাল দিয়েছেন বিপর্যয়। আর কোনো বিপদ আসতে দেননি। তবে বাধ সাধে বৃষ্টি। তাতে অবশ্য জয় আটকানো যায়নি কিউইদের। বৃষ্টি আইনে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।

২০ বলে ২৮ রান করে জিমি নিশাম ও সমান বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন সান্টনার। বাংলাদেশের হয়ে জোড়া উইকেট নেন শরিফুল ও শেখ মেহেদী হাসান।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করা বাংলাদেশের জন্যে কাল হয়েছে বড় ইনিংস খেলতে না পারা। উইকেটে থিতু হয়েও স্বীকৃত ব্যাটারদের প্রায় সবাই ফিরেছেন উইকেট উপহার দিয়ে, একরাশ আক্ষেপ সাথে নিয়ে। অন্যথায় গল্পটা ভিন্নও হতে পারতো, সংগ্রহটাও দাঁড়াতে পারতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

এদিন প্রথম ওভারেই উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। ফিরেন সৌম্য সরকার। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খুললেও পরের বলেই সমাপ্তি তার ইনিংসের। টিম সাউদির বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি, ৪ বলে ৪ রান আসে তার ব্যাটে।

ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে পারননি বেশি সময়। দলের প্রয়োজনে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করা বেশ প্রয়োজন ছিল তার থেকে, তবে ১৫ বলে ১৭ রানেই থামতে হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে।

পঞ্চম ওভারে এডাম মিলনের বিলে অফসাইডে ফিন এলেনের হাতে ক্যাচ দেন শান্ত। ৩১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেট তুলে নিতেও সময় নেয়নি কিউইরা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বেন সিয়ার্সের শিকার রনি তালুকদার। ১০ রান করে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি।

টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর ইনিংসের হাল ধরতে পারেননি আফিফ হোসেন, তাওহীদ হৃদয়ও। থিতু হয়েও ফিরেছেন উভয়ে। ১৩ বলে ১৪ রান করে সান্টনারকে উইকেট দিয়ে আসেন আফিফ, হৃদয়ও আউট হয়েছেন তার বলে। দু'জনেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সেইফার্টকে। হৃদয় করেন ১৮ বলে ১৬ রান।

শামিম পাটোয়ারী আর শেখ মেহেদীর দিকে আশা নিয়ে থাকলেও সমর্থকদের নিরাশ করেছেন তারা। দারুণ কোনো ফিনিশিং দিতে পারেননি, পারেননি ঝড়ো কোনো ইনিংস খেলতে। শামিম ১৪ বলে ৯ ও মেহেদী আউট হন ১৩ বলে ৪ রানে। ১৬ ওভারে ৮৭ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর রিশাদ হোসেন ও তানভীর ইসলামের ব্যাটে এক শ’ পেরোয় বাংলাদেশ। তানভীর ৭ বলে ৮ ও রিশাদ আউট হন ১৩ বলে ১০ রান করে। ৪ বল বাকি থাকতেই গুঁটিয়ে যায় টাইগাররা। কিউই স্পিনার সান্টনার একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট, ৩ উইকেট গেছে সাউদির ঝুলিতে। জোড়া উইকেট নিয়েছেন বেন সিয়ার্স ও এডাম মিলনে।