পেনশন পাবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরাও!

পেনশন পাবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরাও!

ঢাকা, ৭ জুন (জাস্ট নিউজ) : সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় সরকারি পরিচালিত স্কিমে নিবন্ধন করে একজন কর্মজীবী মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা জমা করবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীর পেনশন হিসাবে জমা করবে।

প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে পেনশন ভোগীর সংখ্যা অতি সামান্য। শুধু সরকারি কর্মচারী এবং কতিপয় বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীরা সর্বমোট প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পরিবার বর্তমানে নিয়মিত পেনশন পেয়ে থাকেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বাইরে হতদরিদ্র ৩৫ লাখ মানুষ মাসিক ৪০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন, যা মোট বয়স্ক জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মাত্র। তাদের ভাতার পরিমাণও মানসম্মত জীবনধারণের পক্ষে যথেষ্ট নয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান সরকারি পেনশন কার্যক্রমের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সকল কর্মজীবী মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চাই। প্রস্তাবিত ব্যবস্থার আওতায় সরকার পরিচালিত স্কিমে নিবন্ধন করে একজন কর্মজীবী মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা জমা করবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীর পেনশন হিসাবে জমা করবে। হতদরিদ্র শ্রমজীবীদের ক্ষেত্রে তাদের অংশের অতিরিক্ত হিসেবে সরকার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ওই হিসাবে জমা করবে। এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গঠিত তহবিল বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয় সার্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা হতে থাকবে। ক্রমপুঞ্জিভূত চাঁদা ও আয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসরকালে মাসিক পেনশন প্রাপ্ত হবেন।’

তবে সার্বজনীন পেনশন প্রবর্তনের জন্য মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন হবে, যা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার— একথা উল্লেখ করে মুহিত বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে সুযোগের ন্যায্যতা ও সামঞ্জস্য বিধান করার জন্য উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা, ধারাবাহিক কৌশলগত পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সৃজন, কারিগরি সক্ষমতা ও যথাযথ নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত সকল কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি টেকসই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ এ অর্থবছরেই শুরু করার আশা রাখি। অন্তত পক্ষে কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছা আছে।’

বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরুর পর অর্থমন্ত্রী প্রথমেই চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এতে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এতে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০০১ঘ.)