কে এই জেনারেল সোলাইমানি

কে এই জেনারেল সোলাইমানি

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হয়েছেন। ইরানি সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন। আর আমেরিকা ও তার মিত্রদের সবচেয়ে বড় শত্রু ভাবা হতো তাকে।

দেশের বাইরে অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কুদস ফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সাল থেকে তার আঞ্চলিক প্রভাব প্রকাশ্যে চলে আসে। তখন ইরাক সরকার গঠনে শীর্ষ আলোচনায় তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন।

দুই দশকেরও বেশি আঞ্চলিক প্রভাববলয়ে থাকার পর তার ওপর এই হামলার ঘটনা খুব অবাক করা বিষয় নয়। সম্প্রতি বাগদাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন নতুন সরকার গঠন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন থেকেই তিনি দেশটিতে অবস্থান করছিলেন।

সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তার ছায়া কাজ করে আসছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে সবচেয়ে বড় সেলিব্রেটি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। ইনস্টাগ্রামে তার বিপুল অনুসারী রয়েছেন।

২০১৩ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ইরানের হস্তক্ষেপের পর তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার প্রোফাইল যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি, তথ্যচিত্র, গানের ভিডিও ও অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের পোস্টে ভারী হয়ে ওঠে।

গত অক্টোবরে ইরানি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ লড়াইয়ের সময় তিনি লেবাননে ছিলেন। এ সময় তিনি মাঠে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তার শত্র ও মিত্র– উভয় স্বীকার করে নিয়েছেন যে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবের মূল স্থপতি হলেন তিনি। জিহাদি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার ইরাক ও সিরিয়া ছাড়াও গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কূটনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছেন।

২০১৭ সালে টাইমের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন হিসেবে তাকে নিয়ে লিখেছেন সিআইএর বিশ্লেষক কিনেথ পোলাক। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে তিনি জেমস বন্ড, এরউইন রোমেল ও লেডি গাগা।

‘আর পশ্চিমারা মনে করেন, বিদেশে তিনি ইরানি ইসলামী বিপ্লব রফতানি করেছেন, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দিয়েছেন ও পশ্চিমাপন্থী সরকারগুলো হটাতে ভূমিকা পালন ও বিদেশের যুদ্ধে ইরানের জড়িয়ে পড়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অর্থনৈতিক সংকটে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে চাপ বাড়িয়েছিল। তখন ইরানিদের অনেকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সোলাইমানিকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে তাকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। তবে ইরানের প্রতিবেশী ইরাকের রাজনীতিকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

যখন নতুন সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হয়, তখন গত সেপ্টেম্বরে হঠকারী গণভোটের পর কুর্দিশদের স্বাধীনতা পরিকল্পনা বাতিল করতে চাপ প্রয়োগের নেতৃত্ব দিয়েছেন এই জেনারেল।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায়, তখন থেকেই তিনি আল-কুদশ ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালে ইরাকে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রায়ান ক্রোকার বিবিসিকে বলেন, আফগানিস্তানে আমার ইরানি আলোচক এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে যখন তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়কে অবহিত করেন, শেষ পর্যন্ত জেনারেল সোলাইমানিই সিদ্ধান্তটি নেবেন।

ইরানিদের মর্যাদাপূর্ণ নম্রতা আকাঙ্ক্ষা পূরণে তার নীরব উপস্থিতি সঠিকভাবেই কাজ করে। নিউইয়র্কারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক জ্যেষ্ঠ ইরাকি কর্মকর্তা বলেন, তিনি নীরবভাবে কক্ষের অপর পাশে বসে আছেন। কোনো কথা বলছেন না, মন্তব্য করছেন না। কেবল বসে আছেন এবং শুনছেন। আর সবাই তাকেই নিয়েই ভাবছে।

২০১৮ সালে ইরানপোল ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি জরিপ প্রকাশ করেছে, যেখানে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের চেয়েও তার জনপ্রিয়তা বেশি দেখা গেছে।

লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সম্পার্কের মূলহোতা হিসেবে পশ্চিমারা ভাবতেন তাকে।

এমজে/