ইরানের কয়েক ডজন ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের কয়েক ডজন ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ইরানের কয়েক ডজন খবর সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার এসব সাইটের অনেকটাতে দেখা যায় ‘সিজড’ লেখা নোটিশ। সঙ্গে দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে আরো বলা হয়, এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রেস টিভি এবং আল মাসিরাহ টিভি। আল মাসিরাহ টিভি পরিচালনা করে ইরান সমর্থিত হুতিরা।

পারমাণবিক চুক্তি নতুন করে চালু করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যখন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে তখন এ ঘটনা ঘটলো। ইরানে এরই মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। তাকে অধিক মাত্রায় কট্টরপন্থি হিসেবে দেখা হয়।

তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো দর কষাকষির বৈঠকে মিলিত হবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানিয়ান ইসলামিক রেডিও এবং টেলিভিশন ইউনিয়ন পরিচালিত ৩৩টি ওয়েবসাইট ‘সিজ’ করে দিয়েছে তারা। ইরান সমর্থিত যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ পরিচালিত অন্য তিনটি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। আল আলম ওয়েবসাইটে লেখা ছিল- জব্দ করার ওয়ারেন্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র সরকার আল আলমটিভি ডট নেট-এর ডোমেইন সিজ করেছে। এটা করা হয়েছে ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি, অফিস অব এক্সপোর্ট এনফোর্সমেন্ট এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের আইনের অধীনে।

এ ছাড়া নোটিশ দেখা যায় ইরানের প্রেস টিভির ওয়েবসাইটে, লুয়ালুয়া টিভির ওয়েবসাইটে। প্রথমটি সরকার পরিচালিত ইংরেজি ভাষার স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। অন্যদিকে আল আলম হলো আরবি ভাষার চ্যানেল। আর লুয়ালুয়া টিভি হলো আরবি ভাষায় বাহরাইনের নিরপেক্ষ টিভি চ্যানেল। এটি সম্প্রচার করা হয় বৃটেন থেকে।

অভিযোগ আছে, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদেরকে সমর্থন দেয় ইরান। তারা নিশ্চিত করেছে যে আল মাসিরাহ ডট নেট-এর ডোমেইন ব্লক করে দেয়া হয়েছে। তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যে নতুন ডোমেইন ঠিকানা ব্যবহার করে এসব চ্যানেলের মধ্যে কতগুলো অনলাইনে ফিরেছে।

উল্লেখ্য, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক বছর ধরেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে নতুন করে একটি যুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে গত দুই বছর। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে নতুন করে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেন। এতে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হয়। ওই চুক্তির অধীনে ইরান যতদিন পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ মেনে চলবে, ততদিন অবরোধ প্রত্যাহার করার ঘোষণা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প তা বাতিল করায় পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিয়েছে। ট্রাম্পের পর ক্ষমতায় এসেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বারাক ওবামার করা পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহালের ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনের আগে থেকেই। এক্ষেত্রে আলোচনাও শুরু হয়েছে। তবে উভয় পক্ষ একে অন্যকে আগে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ইরান দাবি তুলেছে, চুক্তি নিয়ে কথা বলার আগে তাদের বিরুদ্ধে দেয়া অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে।

বিবিসি বলছে, চুক্তি নিয়ে সমঝোতার জন্য ষষ্ঠ রাউন্ডের আলোচনা রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিয়েনায়। সেখানে ইরানের দূত এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ৬ দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির দূতরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছার আগেই তা মুলতবি করা হয়েছে।

এমজে/