অভিযানের ‘প্রথম ধাপ সম্পন্ন’, ইউক্রেনে নতুন লক্ষ্যের ঘোষণা রাশিয়ার

অভিযানের ‘প্রথম ধাপ সম্পন্ন’, ইউক্রেনে নতুন লক্ষ্যের ঘোষণা রাশিয়ার

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে ‘মুক্ত’ করার দিকে আক্রমণের লক্ষ্যস্থির করার কথা জানাল রাশিয়া। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে—রাশিয়ার এমন ঘোষণা দেশটির রণকৌশলে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় শুক্রবার দাবি করে—যুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো সম্পন্ন হয়েছে এবং ইউক্রেনের লড়াইয়ের সক্ষমতা কমাতে পেরেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অপারেশন্‌স বিভাগের প্রধান সেরগেই রুদস্কইকে বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দনবাস অঞ্চলের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করাই হবে এখন থেকে তাঁর সেনাদের প্রধান লক্ষ্য। ইউক্রেনে কথিত ‘সেনা অভিযানের’ এক মাসের মাথায় এসে এমন কথা বললেন রুশ সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা।

রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালে দনবাসের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্রোহী ও ইউক্রেনিয়ান সেনাদের মধ্যে লড়াইয়ে কমবেশি ১৫ হাজার মানুষ প্রাণ গেছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, তাদের ‘বিশেষ সেনা অভিযানের’ দুটো ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ছিল। একটি হলো—পুরো ইউক্রেন এবং অন্যটি শুধু দনবাস।

বিবিসি বলছে, রুশ সেনাবাহিনীর অপারেশন্‌স বিভাগের প্রধানকে উদ্ধৃত করে রুশ সরকারি বার্তা সংস্থায় প্রচারিত এ খবর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়—রাশিয়া হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে তাদের লক্ষ্য হাসিলের মাত্রা কমিয়েছে। কারণ, হয়তো ইউক্রেনের উত্তরে এবং রাজধানী কিয়েভে রুশ সেনারা শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ছে।

সেরগেই রুদস্কই বলছেন—লুহানস্ক ওব্লাস্ট অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ এবং দনিয়েস্ক ওব্লাস্ট অঞ্চলের ৫৪ শতাংশ এখন রুশ সৈন্যদের দখলে। তিনি বলেন, গত এক মাসের যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর বেশির ভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাঁর মন্তব্য—যুদ্ধের ‘প্রথম ধাপটি সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে।’

এখন থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য—এমন কথা বলার পাশাপাশি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে—ইউক্রেনের আকাশে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলেই মস্কো পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অবরুদ্ধ অন্যান্য শহরে হামলা বন্ধের বিষয়ে কোনো কথাও বলা হয়নি।

রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলেছে, ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সেনা অভিযান চলবে। তবে, কী সে লক্ষ্য, তা পরিষ্কার করা হয়নি।

যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা সিবিলাইনের প্রধান নির্বাহী এবং সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসিকে বলেছেন, রাশিয়া গত এক মাসে তাদের যুদ্ধে তেমন সাফল্য পায়নি। এবং তার প্রধান কারণ, তারা একসঙ্গে অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়াই করছে।

তবে জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, রাশিয়া পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে ‘অনেকটাই সফল হয়েছে’ এবং দানেস্ক অঞ্চলে তীব্র লড়াই চলছে। তিনি বলে, ‘সেখান (দানেস্ক) থেকে খুব কম খবরই আমরা পাচ্ছি। সেখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে আমরা সেখানে তীব্র লড়াই দেখব।’

ক্রাম্প আরও বলেন, রুশ সেনা এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাদের অবস্থান শক্ত করছে। এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনের শহরগুলোর ওপর অব্যাহতভাবে ভারী গোলাবর্ষণ করে মানুষজনকে ‘উদ্‌বেগের মধ্যে রেখেছে’, তাদের ‘জিম্মি করে ফেলেছে।’