নির্বাচন কমিশন গঠনে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়

নির্বাচন কমিশন গঠনে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়

এবার থেকে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনারের নিযুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম যোসেফের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে উপযুক্ত আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া এই নতুন বিধি চালু থাকবে বলে রায়ে জানানো হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় শুধু সরকারের সুপারিশে। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মেনে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার স্বার্থে এই প্রথা বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য নিযুক্তি প্রক্রিয়ায় বদল আনা জরুরি।

বিচারপতি কে এম যোসেফ, অজয় রাস্তোগি, অনিরুদ্ধ বসু, হৃষিকেশ রায় ও সি টি রবিকুমারের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। তাঁরা বলেন, গণতন্ত্রে নির্বাচন হতে হবে অবাধ। আর, সেই দায়িত্ব কমিশনের। নির্বাচনের পবিত্রতা রক্ষা তাদেরই কাজ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের প্রধান যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হন, নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যকেও সেইভাবে নিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী নেতা ও প্রধান বিচারপতির সুপারিশ মেনে রাষ্ট্রপতি সেই নিযুক্তি দেবেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছরের। সচরাচর দেখা যায়, সরকারের অনুগত ও ঘনিষ্ঠ আমলাদেরই এই পদে নিযুক্তি দেওয়া হয়। এইভাবে মনোনয়ন নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। গত শতকের ১৯৯০–এর দশকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষন কমিশনের মান ও নিরপেক্ষতাকে যে উচ্চতায় স্থাপন করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা বজায় থাকেনি। ইদানীং কমিশনের বিরুদ্ধে শাসক দলের প্রতি চূড়ান্ত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী নেতারা।

সম্প্রতি শিবসেনার নাম ও প্রতীক বিক্ষুব্ধ শিন্ডে গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে। উদ্ধব গোষ্ঠী কমিশনকে ‘দলদাস ও স্তাবক’ বলে অভিহিত করেছেন। গত ১০ বছর ধরে নির্বাচনী প্রচারে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার বহু অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও সেই অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। কমিশন তাঁদের ভাষণে কোনো ত্রুটি খুঁজে পায়নি।

নির্বাচন কমিশনে কিছু দিন আগে অন্যতম কমিশনার হিসেবে নিযুক্তি পান কেন্দ্রীয় আমলা অরুণ গোয়েল। গত বছরের ১৮ নভেম্বর তিনি স্বেচ্ছা অবসর নেন। ১৯ নভেম্বর সরকার তাঁকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করে। ২১ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুপ্রিম কোর্ট এই ‘বিদ্যুৎগতির নিযুক্তি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। নিযুক্তি–সংক্রান্ত ফাইলও তলব করেছিলেন।

এই রায়ের পর নির্বাচন কমিশন এক স্বাধীন সচিবালয় পাবে। স্বাধীনভাবে নিয়মনীতি তৈরি করতে পারবে। নিজেদের বাজেট স্বাধীনভাবে তৈরি করতে পারবে। তহবিলের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। সরাসরি কেন্দ্রীয় ট্রেজারি থেকে টাকা তোলার ক্ষমতা পাবে।