বিদ্রোহীদের কাছে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

বিদ্রোহীদের কাছে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

বিদ্রোহী সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা একটি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার বা সদর দপ্তর, যুদ্ধবিমান এবং কয়েক শত সেনাকে হারিয়েছে দু’দিনে। এ খবর দিয়ে অনলাইন ইরাবতী বলছে, গত দু’দিনে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস এবং কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপ দেশে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা জোরালো করেছে। এ ঘটনা ঘটেছে শান, চিন, রাখাইন রাজ্যে এবং সাগাইং অঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে কাচিন ইন্ডিপেডেন্স আর্মি (কেআইএ)।

মঙ্গলবার শান রাজ্যের নাম্পাকা গ্রামে কেআইএ’র সেনারা এ ঘটনা ঘটায় বলে নিশ্চিত করেছেন কেআইএর তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা কর্নেল নাও বু।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কুটকাইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেআইএ এবং তার মিত্ররা। ৩রা জানুয়ারি তারা কাচিনের ওয়াইংমাও শহরের একটি ফ্রন্টলাইন ঘাঁটিতে যাওয়ার পথে একটি সামরিক পরিবহন হেলিকপ্টারকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে কেআইএ। এতে কমপক্ষে ৬ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

রাখাইনের কাউকতাও শহর দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর মঙ্গলবার আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করে সামরিক বাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৩৯-এর পুরো ইউনিট।

এর মধ্যে ওই ইউনিটের সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। গত বৃহস্পতিবার আরাকান আর্মি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন এবং আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন ৩৭৭-কে টার্গেট করে। রোববার আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। তারা ওই ব্যাটালিয়নকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়। কিন্তু সামরিক জান্তার মদতপুষ্টরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার তাদের ঘাঁটি থেকে সাদা পতাকা উড়ানো হয়। এর অর্থ আত্মসমর্পণ। ফলে পরাজয়ের পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কমপক্ষে ১০০ সেনা সদস্য আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করে সোমবার। এর মধ্যে কৌশলগত একজন কমান্ডারও আছেন।

আরাকান আর্মি হলো ব্রাদারহুড এলায়েন্সের একটি সদস্য গ্রুপ। ব্রাদারহুড মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল শান প্রদেশে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপ। তাদের আক্রমণে সেনাবাহিনী ওই প্রদেশে দিশেহারা। ওদিকে গত বছর ১৩ই নভেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যে অভিযান বিস্তৃত করে আরাকান আর্মি। তখন থেকেই তারা কমপক্ষে ১৫০টি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। প্রতিবেশী চিন প্রদেশে পালেতোয়া শহর দখল করেছে।

উত্তরে শান প্রদেশে শান্তিচুক্তি করার পরও সামরিক জান্তা সেখানে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এমনটা দাবি করেছে ব্রাদারহুড এলায়েন্সের সদস্য সংগঠন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। তারা বলেছে, সামরিক জান্তার কিছু সেনা এখনও শান রাজ্যের কোকাং অঞ্চলে রয়ে গেছে। তারাই এমএনডিএএর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেনেড হামলা করেছে। এর ফলে সেখানে গোলাগুলি শুরু হয়। পাল্টা গুলি ছোড়ে এমএনডিএএর সেনারা। জবাবে সামরিক জান্তার সেনারা এমএনডিএএর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৬০ মিলিমিটারের মর্টার নিক্ষেপ করে। তারা চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে স্থল ও আকাশপথে বেসামরিক জনপদে হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে।

মঙ্গলবার তারা হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রিত শান প্রদেশের কুটকাই, মঙমিট এবং নাওংকিও অঞ্চলে।

ওদিকে ৫ দিনের আক্রমণে মঙ্গলবার চিন রাজ্যের টেডিম শহরের তাইঙ্গেন গ্রামে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে জাতিগত বিদ্রোহী চিন গ্রুপ। এতে সামরিক বাহিনীর কমপক্ষে ৩০ জন সেনা সদস্য ও পুলিশ নিহত হয়েছেন। তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। সেখানে অভিযানকালে সেনাবাহিনী যুদ্ধবিমান ও পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করে। এ যুদ্ধে বিদ্রোহীদের কমপক্ষে আটজন সদস্য নিহত হয়েছেন।

সাগাইং অঞ্চলে কমপক্ষে তিনজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। সোমবার খিন ইউ শহরে আহত হয়েছেন আরও কিছু সদস্য। ৬টি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের গ্রুপ ড্রোন হামলা চালায় সেখানে। এ কথা বলেছে ঈগল গেরিলা ফোর্স। তারা এই আকাশপথের হামলায় সমন্বয় করেছে। প্রথমেই জান্তাপন্থি পিউ শ হতি মিলিশিয়া গ্রুপের ওপর ১০টি ড্রোন বোমা হামলা চালায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস। সোমবার এ ঘটনা ঘটে পাইন হতাউং গ্রামে। এতে একজন মিলিশিয়া নিহত হন। আহত হন তিনজন। মঙ্গলবার পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস খিন ইউ শহরে জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট অফিসে এবং শাসক গ্রুপের বাহিনীর ওপর, একটি পুলিশ স্টেশনে বোমা ফেলে। এতে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য নিহত ও ৫ জন আহত হন।