বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এটা সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে রূপ নেয়। এটি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। গত দুই সপ্তাহের একটানা অনাবৃষ্টির কারণে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে তাপ প্রবাহের। তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। গতকাল দুপুর পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত ছিল।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শনিবার দেশের কয়েকটি স্থানে তবুও মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাবে। ঢাকা, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, ফেনী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালীতে মৃদু তাপ প্রবাহ থাকতে পারে এবং আজই উল্লিখিত এ স্থানগুলোর উপর থেকে তাপ প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে দুই হাজার ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে দুই হাজার ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে দুই হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে দুই হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরো শক্তিশালী হতে পারে এবং অগ্রসর হতে পারে উত্তর-পশ্চিম দিকে। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সেন্টারগুলো ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছে যে এটা শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তাহলে পূর্বনির্ধারিত নাম অনুসারে এটা হবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফ্যানি’। এর প্রভাবে আগামী দু-একি দনের মধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এটা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর বেশ উত্তাল। চট্টগ্রাম, কক্সাবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
নিম্নচাপটি থেকে ঝড় হলে শেষ পর্যন্ত আগামী মে মাসের ৪ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। উপকূলে উঠার আগ মুহূর্তে ফ্যানির গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১২০ কিলোমিটার হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটা কোথায় যাবে এবং কোন উপকূলে আঘাত করবে তা পরিষ্কার নয়। তবে আবহাওয়াবিদেরা ধারণা করছেন যে এটা হয়তো বাংলাদেশ অথবা মিয়ানমার উপকূলে অথবা উভয় উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া অফিস অবশ্য তামিলনাড়ু থেকে মিয়ানমার উপকূলের যেকোনো স্থানে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস চলতি এপ্রিল মাসে দুটি নিম্নচাপ এবং এটা থেকে কমপক্ষে একটি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল। এপ্রিলের গত ২৫ দিনে কোনো নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় হয়নি। এটাই এ মাসের প্রথম নিম্নচাপ। আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সব সময় বাস্তবে রূপ নেয় না। কোনো কোনো সময় পূর্বাভাস ব্যর্থ হয়। কারণ আবহাওয়া কোনো নির্দিষ্ট ছক মেনে চলে না। চলতি মাসে হয়তো নিম্নচাপ পর্যায়ে থাকতে পারে এটি। মে মাসে গিয়ে তা ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ারই আশঙ্কা বেশি।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে ইতোমধ্যে গরম কমতে শুরু করেছে গতকাল দুপুরের পর থেকে। তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আকাশে মেঘ দেখা দিয়েছে। ফলে রোদের তেজও কমে গেছে। রাতের বেলা হয়তো তাপমাত্রা কমে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসতে পারে।
এমজে/