করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে আরো ৬৯ জন, মৃত ৬৩০ ছাড়িয়েছে

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে আরো ৬৯ জন, মৃত ৬৩০ ছাড়িয়েছে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে আরো ৬৯ জন মারা গেছেন। শুধু হুবেই প্রদেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৬৩০ ছাড়িয়ে গেছে।

হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ হাজার ৮০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৪১ জনের অবস্থা গুরুতর।

বৃহস্পতিবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় আড়াই হাজার জন। এখন পর্যন্ত চীনসহ সারাবিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিন মারা গেছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগেই সতর্ক করে দেয়া চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানে মারা যান তিনি। গত ১২ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে ১ ফেব্রুয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

লি ওয়েনলিয়াং সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে এই নতুন ভাইরাস। তবে তখন তার সে কথায় পাত্তা দেয়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাল্টা তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হুমকি দেয়া হয়।

এদিকে চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত দুইজন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে, গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

বিশ্বের অনেক দেশই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো চীনগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও ভয়াবহ কোপ পড়েছে হুবেই প্রদেশে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে চীনসহ বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত এবং প্রাণহানি যত হয়েছে তার ৯৭ শতাংশ হুবেইতে এবং সব রোগীর ৬৭ শতাংশও সেখানকার।

নতুন এই করোনাভাইরাস উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে পশুর মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটায়। এরপর মানুষের মধ্যে ব্যাপকহারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। চীনের নতুন চন্দ্রবর্ষ শুরুর দিন ২৪ জানুয়ারির আগে এটি পুরোপুরি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

এদিকে করোনাভাইরাস সংকটে সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানি। ফলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু জাহাজেই নয়, ব্যাহত হচ্ছে আকাশপথে পণ্য পরিবহনও। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সঙ্গে সম্পর্কিত আইএজি কার্গো গত সোমবার অন্তত চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত চীনের মূলভূমিতে কার্গোসেবা বাতিল ঘোষণা করেছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস।