বাসা থেকে তুলে নেবার বিষয়টি অস্বীকারের প্রায় ২১ ঘন্টা পর রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের সদস্য দিদারুল ভূঁইয়াকে বুধবার রমনা থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়।
র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার (অপস) আবু জাফর বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় জাগো নিউজকে জানান, রমনা থানায় দায়ের করা একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিদারুল ভূঁইয়ার বোনজামাই জাকির চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘মঙ্গলবার ইফতারের সময় রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টারের পেছনের চ-৫৫/১ বাসার ষষ্ঠ তলার অফিস থেকে র্যাব-৩ এর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই ভবনের ষষ্ঠ তলায় দিদারুলের রাষ্ট্রচিন্তার অফিস। একই ভবনের তৃতীয় তলায় আমি থাকি। ইফতারের সময় ভবনের গার্ড আমার বাসায় এসে জানায় র্যাব এসেছে। দিদারুল স্যারকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সেখানে যাই। জানতে চাই, তারা কারা এবং কেন দিদারুলকে নিয়ে যেতে চান? সাদা পোশাকের হলেও তারা র্যাবের পরিচয় দিয়ে বলেন, আরও দুজনকে তারা আটক করেছেন। তাদের সাথে দিদারুলের যোগাযোগ রয়েছে কি-না, সেটা খতিয়ে দেখতে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
যাওয়ার সময় অফিসের মোবাইল, ল্যাপটপ, দুটি সিপিইউ, ভিডিডি রিডারও নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা- বলেন তিনি। তবে সে সময় র্যাব-৩ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রমনা থানায় দিদারুলকে সোপর্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে (৬টায়) দিদারুলকে রমনা থানায় হস্তান্তর করেছেন র্যাব-৩ এর সদস্যরা। ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে রমনা থানায়। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকেও গতকাল মঙ্গলবার লালমাটিয়ার বাসা থেকে আটক করে র্যাবের আরেকটি দল। এরপর তাদের রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
অন্যদিকে, দিদারুল ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ ছাড়াও ‘পরিবর্তন চাই’ নামক আরেকটি সংগঠনের ট্রাস্টি সদস্য। বোনজামাই জাকির চৌধুরী জানান, দিদারুল ভিন্ন চিন্তার। রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারমূলক কাজ ও লেখনিতে জড়িত। সরকারের নানা অসঙ্গতি নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও গণক্ষমতাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকট চিহ্নিত করা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাব্য পথ অনুসন্ধান করার একটি উদ্যোগ’।