বৃদ্ধা সুফিয়া চোখে দেখেন না, কানেও কম শোনেন

অভাবে শতবছরের বৃদ্ধা মাকে রেখে গেলো মহাসড়কে, অতঃপর...

অভাবে শতবছরের বৃদ্ধা মাকে রেখে গেলো মহাসড়কে, অতঃপর...

অভাবের তাড়নায় শতবছরের বৃদ্ধা মাকে মহাসড়কের পাশে রেখে গেলেন মেয়ে। বৃদ্ধার নাম সুফিয়া খাতুন। তার ছেলে মেয়ে দুজন। তারাও বয়সের ভারে ন্যুব্জে পড়েছেন। ভিটেমাটি কিছুই নেই। দাউদকান্দি ইউনিয়নের নছরুদ্দি গ্রামে সুফিয়ার বাড়ি। তার স্বামী কালাই মিয়া ২০ বছর আগে মারা গেছেন।

সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধা সুফিয়া চোখে দেখেন না। কানেও কম শোনেন। তাকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ফেলে যাওয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। প্রথমে তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও আপন কাউকে কাছে না পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর উপজেলা প্রশাসন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির প্রায় চার মাস পরও সুফিয়াকে তার পরিবারের সদস্যরা কেউ নিতে আসছেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম সুমন বলেন, গত ১৮ ফেরুয়ারি থেকে সুফিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার দেখভাল করছেন নার্সরা। এদিকে তিনি রাতে বিভিন্ন রোগীর পাশে গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। এক রোগীর টেনে ক্যানোলা খুলে ফেলেছেন। এনিয়ে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। করোনা সংক্রমণকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ সময় ভর্তি থাকাটাও তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে উপজেলা প্রশাসন সুফিয়ার ছেলে মোখলেছুর রহমানের খোঁজ পান। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেকে এনে কথা বলা হয়। তখন তাদের পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কথা জানা যায়।

সুফিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, পরিবারটির এক শতক জমির ওপরে একটা বসতঘর ছাড়া কিছুই ছিল না। সেটিও এখন আর নেই। একমাত্র ছেলে মোখলেছুর রহমান বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ। তিনি বসতভিটার নিজের অংশটি পাঁচ বছর আগে বিক্রি করে দেন একমাত্র বোন মিনা আক্তারের কাছে। এরপর থেকে মোখলেছুর রহমান থাকেন তার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে।

মোখলেছুর রহমান বলেন, অভাব-অনটন দেখে নয় বছর আগে তার স্ত্রী সৌদি আরবে চলে গেছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তিনি বাসে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। থাকেন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। এমন পরিস্থিতিতে মাকে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। সুফিয়ার একমাত্র মেয়ে মিনাও এখন বয়োবৃদ্ধা। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে। তিনি পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন। তার কাছেই এত দিন ছিলেন মা সুফিয়া। দারিদ্র্যের কারণে তিনি তার মাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে যান।

মিনা বলেন, বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। তার স্বামী আবদুল মান্নানও বৃদ্ধ। কোনো উপার্জন করতে পারেন না। এক ছেলের আয়ে কোনোমতে সংসার চলে। মাকে কীভাবে রাখবেন?

ইউএনও কামরুল ইসলাম খান বলেন, সুফিয়া খাতুনের ছেলে মোখলেছুর রহমানের তার মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও সামর্থ্যরে অভাবে নিতে পারছেন না। আবার সুফিয়া খাতুনের কাছের অন্য কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। বৃদ্ধার দায়িত্ব নেওয়ার মতো বিশ্বস্ত লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর আগে স্বেচ্ছায় কেউ তার দায়িত্ব নিতে চাইলে দেওয়া হবে। সুফিয়া বেগমকে বয়স্ক ভাতার কার্ড ও হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় কেউ দায়িত্ব নিতে চাইলে তাকে এক লাখ টাকায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

এই মুহূর্তে তাঁকে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার আগারগাঁও সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে তার বিষয়ে বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে পৌঁছে দিতে হবে। এনিয়ে দাউদকান্দি থানাকে বলা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে তাকে ঢাকা পাঠানো যাবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ওসি রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।