ইউএনও ওয়াহিদার বাবার কোমরের নিচ থেকে প্যারালাইজড

ইউএনও ওয়াহিদার বাবার কোমরের নিচ থেকে প্যারালাইজড

সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলী শেখের (৭০) কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোটাই প্যারালাইইজড হয়ে পড়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারির কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুন্নবী লাইজু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের সঙ্গে তাকেও কুপিয়ে আহত করেছিল সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার অবস্থার অবনতি হলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে তাকে ভিআইপি কেবিনে নেওয়া হয়। তিনি কথা বলতে ও খেতে পারলেও চলাচল করতে পারছেন না। আপাতত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের আগে থেকে ডায়াবেটিস ছিল। ঘটনার রাতে তিনি সন্ত্রাসীদের দ্বারা ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে তার স্পাইনাল কর্ডে ইনজুরি হয়। সাধারণত এই ধরনের জটিলতায় চার হাত-পা অবশ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তার দুই হাত কিছুটা সচল থাকলেও কোমরের নিচ থেকে পুরো নিচের অংশ অবশ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত এই ধরনের সমস্যা থেকে সেরে উঠতে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আপাতত তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন।’

তিনি আরও জানান, একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সেই চিকিৎসক দলের মাধ্যমে তার চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তার স্বজনরা ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘ওমর আলী শেখের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা যদি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও'র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার।

অস্ত্রোপচারের পর ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট ৯টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুরি ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের ওপরে একটি, নাকের ওপরে একটি এবং চোখের নিচে একটি। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও রিপেয়ার করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী। তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। তাকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর বলতে পারবো। শরীরের ডান পাশ প্যারালাইজড ছিল, সেটা আশা করি সচল হয়ে যাবে। তবে তাতে সময় লাগবে।’