অনৈতিক কর্মকাণ্ড: পিবিআই’র কর্মকর্তা লাভলীকে অব্যাহতি

অনৈতিক কর্মকাণ্ড: পিবিআই’র কর্মকর্তা লাভলীকে অব্যাহতি

ফেনীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) লাভলী ফেরদৌসীকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পিবিআই ফেনী ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান রোববার বিকেলে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) লাভলী ফেরদৌসী সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে বদলি হয়ে ফেনী পিবিআইতে যোগদান করেছিলোন। কাজে যোগ দেওয়ার পরই তাকে সাময়িক অব্যাহতির নির্দেশনা এখানে আসে।

পিবিআই ফেনী ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উপ-পরিদর্শক (এসআই) লাভলী ফেরদৌসী কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুনেছি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

পিবিআই সূত্র জানায়, এসআই লাভলী ফেরদৌসী ২০১৫ সালে প্রথম সংসারের ইতি টেনে কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাইম্মারঘোনা এলাকার বেলাল আহমদের ছেলে শাহজাহানের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে বন্ধনে জড়ান। দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রথম সংসারে দুই সন্তান ও পরের সংসারে এক সন্তানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব লাভলীকে পালন করতে হয়। একই সাথে দ্বিতীয় স্বামী বেকার হওয়ায় তাঁর হাত খরচও জোগান দিতে হতো লাভলীকে। এতে করে সরকারি বেতনে সংসারের ব্যয় সামলাতে না পেরে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন এসআই লাভলী।

অভিযোগ রয়েছে, মামলা তদন্তে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে যেত লাভলী। স্বামীকে দিয়ে অনৈতিক নানান কাজ করানোর পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা নিয়ে মামলার প্রতিবেদনে নয়ছয় করা হতো। একই সাথে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে লাভলী।

সম্প্রতি একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাদী পক্ষের কাছ থেকে লাভলীর ঘুষ নেয়ার অডিও ফাঁস হয়। যেখানে ঘুষ হিসেবে দেয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এসআই লাভলী ফেরদৌসী ও তাঁর স্বামী শাহজাহান। অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে পিবিআই কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে পিবিআই কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি প্রায় এক সপ্তাহ কক্সবাজারে অবস্থান করে অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে এসআই লাভলী ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের শৃঙ্খলা আইনে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। কমিটির সুপারিশে এসআই লাভলীকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া কথা বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর এবং পিবিআইয়ের নামে প্রতারণার শামিল। তাঁর অপরাধের কারণে কক্সবাজার পিবিআইয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে স্বামীকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানো এবং তদন্তকাজে স্বামীকে সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টি লাভলী স্বীকারও করেছেন। মূলত স্বামীর লোভের কারণে লাভলী পুলিশের শৃঙ্খলা পরিপন্থি নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির আরেক দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে স্বামীকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানোর ঘটনায় পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিস্মিত এবং হতবাক হয়েছেন। এটাই তাকে চরম বিপদে ফেলেছে। এসআই লাভলী ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর অধিকাংশরই সত্যতা পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।