নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠক: যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝাতে লবিস্ট নিয়োগ দিতে চায় সরকার

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠক: যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝাতে লবিস্ট নিয়োগ দিতে চায় সরকার

র‍্যাব এবং এই বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পেছনে একটি ‘পিআর এজেন্সি’ কাজ করেছে বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

 

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকের পূর্বনির্ধারিত আলোচ্য সূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি না থাকলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের লবিং ফার্মগুলো আর্থিক চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষায় প্রচার ও সমর্থন আদায়ের কাজটি করে থাকে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ দেশটির রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারক মহলে লবিং প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছু অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়েছে। এই আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মনে করছে, ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ভূরাজনীতিও কাজ করেছে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে একটি ‘পিআর গ্রুপ’ সরকারের বিপক্ষে কাজ করছে। সেখানকার কিছু সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানকে ভুল বোঝানো হয়েছে। প্রয়োজনে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে একজন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়াটি নিয়ে আগে থেকে কেন জানা যায়নি? তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সংসদীয় কমিটিতে তলবেরও প্রস্তাব করেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার ও মো. আবদুল মজিদ খান অংশ নেন।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে সার্বিকভাবে আলোচনা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ‘পিআর এজেন্সি’ কাজ করছে। সংসদীয় কমিটিও সরকারের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করতে বলেছে। সে সঙ্গে সেখানকার দূতাবাসকে আরও সক্রিয় হতে বলেছে।