ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত

আগ্রহ থাকার পরও অভাবের কারণে সময়মতো পড়াশুনা হয়ে ওঠেনি শ্রীপুরের বেলায়েত শেখের। তাই নিজের স্বপ্ন পূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বসেছেন তিনি।

শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (দেড় ঘণ্টা) এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এফ এম মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের ৮ম তলার ৮০২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, সংসারের অসচ্ছলতা, দরিদ্রতা আর অসুস্থ বাবা-মায়ের কারণে ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া বেলায়েত ১৯৮৩ সালে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েন। কিন্তু উচ্চশিক্ষা লাভের অদম্য আগ্রহ মনের ভেতরে পুষে রাখেন তিন। এরই মধ্যে বেলায়েত বিয়ে করেন এবং দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তানের বাবা হন। সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন।

তবে অনটনের সংসারের যাঁতাকলেও তার উচ্চশিক্ষা লাভের আগ্রহ ধীরে ধীরে প্রবল হতে থাকে। অবশেষে সুযোগ আসে স্বপ্ন পূরণের।

তিনি ২০১৯ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সলে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন তিনি। কোচিংও করেছেন।

কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা বলেনন, পড়াশুনার প্রতি বেলায়েতের আগ্রহ দেখে আমরা অবাক হয়েছি। পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে। ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় তার উতরে যাওয়ার চান্সও প্রবল।

পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বেলায়েত শেখ বলেছিলেন, ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। বাবার অসুস্থতা এবং অভাবের তাড়নায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালে পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা বন্যা আর অভাবের কারণে ভেস্তে যায়। ১৯৯০ সালেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে সময় মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের কথা ভেবে বিয়ে করেন তিনি। বাবার সংসারে তখনো অভাব। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল।

২৫-২৬ বছর একাধারে সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে পড়াশুনায় মনোযোগ দেওয়া হয়নি। এসএসসি দিতে না পারলেও মেকানিক্যাল কোর্স করেছিলেন। মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ ছিল। ওইসব করেই সংসার চলছিল। ভাই-বোনদের পড়াশোনার দায়িত্বও ছিল আমার ঘাড়ে। কিন্তু তার পরও তাদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে না পারার আক্ষেপ পুষে রাখতাম।

বেলায়েত শেখ বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল সন্তানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়বে। কিন্তু স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়। সন্তানদের এই ব্যর্থতা আমার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং সেই ক্ষোভ থেকে ২০১৯ সালে বাসাবো দারুল ইসলাম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এসএসসি এবং ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করি। অনেক আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রবল আগ্রহ ছিল। এইচএসসিতে ভালো ফল আমাকে ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছাকে আরও প্রবল করে তুলেছে।

তিনি বলেন, বয়স চল্লিশ পার হলে পড়া আর মাথায় ঢোকে না। পড়া সহজে মুখস্থ হয় না, অনেক কষ্ট করতে হয়। পড়া আয়ত্তে আনার জন্য বারবার লিখতে হচ্ছে। চুল পেকে গেছে। নিজেকে তরুণ ভাবতে ভালো লাগে, তাই চুলে নিয়মিত কালি দেই। ৫৫ বছর বয়সে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা দেব। সবার কাছে দোয়া চাই।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। তার স্বপ্ন ঢাবিতে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনার। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুরের প্রতিনিধি। এ ছাড়া জেটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।