পণ্য রপ্তানিতে ভয়াবহ জালিয়াতি, পাচার হয়েছে বিপুল অর্থ

পণ্য রপ্তানিতে ভয়াবহ জালিয়াতি, পাচার হয়েছে বিপুল অর্থ

পণ্য রপ্তানিতে চলছে ভয়াবহ জালিয়াতি। স্যাম্পলের আড়ালে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে আস্ত কন্টেইনার। দুই সংখ্যার কোড নম্বরের কারসাজিতে। ইতোমধ্যে ৬৬টি চালান পার করেছে চক্রটি।

অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ১৫টি চালান জব্দ করেছে শুল্ক-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তাদের আশঙ্কা জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার হয়েছে বিপুল অর্থ।

জানা গেছে, ০ ১....., ১ ০....., ২ ০.... দুই সংখ্যার এই ৩টি কোড নম্বর ব্যবহার হয় পণ্য রপ্তানিতে। যা ইঙ্গিত করে লেনদেনের ধরন। কোড নম্বর শূন্য এক হলে এলসি আর এক শূন্য হলে কনট্রাক্ট বা টিটির মাধ্যমে পণ্যের দাম পরিশোধ বুঝায়। এছাড়া স্যাম্পল হলে কোড নম্বর হয় দুই শূন্য।

দুই সংখ্যার ওই কোডে লুকিয়ে আছে বিপুল পরিমাণ অর্থের রহস্য। ফলে সংখ্যার ওলট-পালটে পাল্টে যাচ্ছে পণ্যের ধরন। কনটেইনার ভর্তি পণ্য হয়ে যাচ্ছে স্যাম্পল। যার আড়ালে একের পর এক কন্টেইনার যাচ্ছে বিদেশে। কিন্তু দেশে আসছে না কোনো টাকা। কোডের ফাঁদে এড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখও।

একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে স্যাম্পলের কোড নম্বর ব্যবহার করে অসংখ্য কনটেইনারভর্তি পণ্য পাচার করছে-এমন তথ্যে মাঠে নেমে ভয়াবহ জালিয়াতি উদঘাটন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তাই চট্টগ্রামের ওসিএল ডিপোতে আটকানো হয়েছে মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, সুদান আর ইকুয়েডরে পাঠানোর অপেক্ষায় থাকা ১৫টি চালান। যার সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান লিম্যাক্স শিপার্স লি.।

নথিতে রপ্তানিকারক হিসেবে ঢাকার সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের নাম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এসব পণ্য তাদের নয়। কাস্টমস থেকে রপ্তানি সংক্রান্ত ক্ষুদে বার্তায় জানার পর একটি জিডিও করেছে তারা। যেখান থেকে এলসি খোলার কথা বলা হয়, সে অগ্রণী ব্যাংকও বলছে, সাবিহা ফ্যাশনের কোনো ঋণপত্র তারা খোলেননি, প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকও নয়।

সিঅ্যান্ডএফ লিম্যাক্স শিপার্সের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, অফিসটি মাঝে মাঝে খোলা হয়। সংশ্লিষ্ট ফরওয়ার্ডার এসবি অ্যাসোসিয়েটসে গেলেও কেউ মুখ খোলেনি। তথ্য বলছে, সিঅ্যান্ডএফের কর্মচারী ওবায়েদই দেখভাল করে প্রতিষ্ঠানটি। তার সঙ্গে যোগাযোগ রপ্তানিকারক আর রাসেল নামে এক সিঅ্যান্ডএফ ব্রোকারের।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেরাই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান রপ্তানিকারকের সহযোগী। সিঅ্যান্ডএফ এবং শিপিং এজেন্ট নেতারা বলছেন, কাস্টমসের নজরদারির অভাব অথবা সম্পৃক্ততায় ঘটেছে এমন জালিয়াতি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি, জালিয়াত চক্রের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পেলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

অনুসন্ধান বলছে, পদে পদে কারসাজির আশ্রয় নেয় চক্রটি। ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রপ্তানিকারকের অনুকূলে ব্যাংকের ইস্যু করা ইএক্সপি ও এলসি নম্বর। আবার স্যাম্পলের কোড ব্যবহার করা হলেও; দেখানো হচ্ছে পণ্যের দাম।

শুল্ক-গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কন্টেইনার পাচারে একেকবার একেকজনের নাম-তথ্য ব্যবহার করে চক্রটি। আটক ১৫টি চালানের আগে কেবল জানুয়ারি মাসেই সাবিহা সাইকির নামে পাঠানো হয় ৬৬টি চালান।

নথিপত্রের কারসাজিতে কোটি কোটি টাকা পাচারের এ চক্রে কারা কারা জড়িত তা বের করার কাজ চলছে বলে জানান কর্মকর্তারা।