তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই, ফুলপরীকে ইবির সেই ছাত্রলীগ নেত্রী

তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই, ফুলপরীকে ইবির সেই ছাত্রলীগ নেত্রী

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থীর কাছে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা মাফ চেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন।

তবে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এমনকি তদন্ত কমিটির কোনো সদস্যও এ বিষয়ে কথা বলেননি।

আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় ফুলপরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ফুলপরী বলেন, ওখানে পাঁচজন ছিলো। সেখানে কে কী করেছে, সবকিছুই বলে দিয়েছি, চিনিয়ে দিয়েছি। তখন তারা আমাকে বলেছে, ফুলপরী তুমি এরকম করো না। তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই। এসব করো না। অন্তরা (সানজিদা চৌধুরী) আপু আমার কাছে খুব অনুরোধ করেছে। তাদের কান্না কান্না ভাব। কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা। আমি তখন বললাম কেবল মাত্র চার পাঁচদিন হয়েছে ক্যাম্পাসে এসেছি। কিন্তু আপনারা আমাকে নিয়ে একটুও ভাবেননি। এখন প্রশাসন যেটা করবে সেটাই। এ সময় তারা রীতিমতো কেঁদে ফেলেছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় আজ তৃতীয় দিনের মত দিনভর তদন্ত করেছে তিনটি তদন্ত কমিটি। উচ্চ আদালত কর্তৃক গঠিত কমিটি, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার তাদের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরে বিকেলে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযক্ত পাঁচ ছাত্রী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক রেবা মন্ডলের কক্ষে মুখোমুখি করা হয়।

এর আগে আজ দুপুর ১২টার দিকে ফুলপরী তার বাবা আতাউর রহমানকে নিয়ে পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। ঘটনার পর থেকে গত পাঁচ দিনে এ নিয়ে তিনবার ক্যাম্পাসে এসেছেন তিনি। এরপর তাদের প্রধান ফটক থেকে হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে হল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ফুলপরীর কাছে ১৩ পেজের একটি লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই কমিটিকে দেওয়া মৌখিক বক্তব্য আজ লিখিত আকারে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

হল থেকে বের হওয়ার পর ফুলপরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মন্ডলের কক্ষে নেওয়া হয়। কয়েক মিনিট পর অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা খাতুন উর্মী ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। তবে ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমানকে কক্ষের বাইরে রাখা হয়।

এর প্রায় এক ঘণ্টা পর বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে ফুলপরী প্রথমে কক্ষ থেকে বের হন। তিনি বলেন, আমি তাদের দেখে আজ ভয় পাইনি। আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে সব বলেছি। ম্যাম সব কিছু লিখে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তাবাসসুম বলেন, আমাদের যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলেছি। তারা প্রায় কান্না করে ফেলেছে, ফুলপরীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের চোখ দেখে কি মনে হচ্ছে আমরা কান্না করেছি? এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।

এদিকে তদন্ত শেষে আইন বিভাগ থেকে বের হয়ে বাকি অভিযুক্তরা মাক্স ও ওড়নায় মুখ লুকিয়ে দ্রুতগতিতে বের হয়ে যায়। গণমাধ্যমকর্মীরা তদন্ত কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।

তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।