‘দূর হ দুঃশাসন’ লেখা ব্যানার খুলতে চাপ পুলিশের বাড়াবাড়ি

‘দূর হ দুঃশাসন’ লেখা ব্যানার খুলতে চাপ পুলিশের বাড়াবাড়ি

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠানে ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’ লেখা ব্যানার খুলে ফেলতে পুলিশের চাপের বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি বলছে সুশীল সমাজ। এর পেছনে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।

সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন, যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সহ্য করতে পারে না, তারা পুলিশের মাধ্যমে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অথচ প্রশাসনের ছত্রচ্ছয়ায় প্রভাবশালী গোষ্ঠী নানা অপকর্ম করে বেড়ালেও সেদিকে প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরতে চায়। এরপরও নারায়ণগঞ্জের মানুষ সব অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে, প্রতিবাদ করে যাবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’ লেখা ব্যানারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সেখানে সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান এসে ব্যানার খুলে ফেলতে তাদেরকে চাপ দেন। একপর্যায়ে ব্যানারের লেখাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হয় আয়োজকেরা।

নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ধীমান সাহা ওরফে জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুখ বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু আমরা আমাদের মত প্রকাশ করে যাব।’

মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা মামলার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘১০ বছর যাবৎ আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার পাচ্ছি না। খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, এটা কী দুঃশাসন নয়? নাকি আমরা এটাকে সুশাসন বলব? ব্যানার খুলে ফেলতে গিয়ে পুলিশ ওপর মহলের চাপের কথা বলেছে, এই ওপর মহলটা কারা, তা আমরা জানতে চাই। দেশের মানুষ জানতে চায়।’

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’ লেখা ব্যানারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সেখানে সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান এসে ব্যানারটি খুলে ফেলতে তাদেরকে চাপ দেন। পুলিশের চাপে বাধ্য হয়ে ব্যানারের ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’ লেখাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন আয়োজকেরা।

এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ মিনার এলাকা থেকে গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দেড় ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ব্যানারে লেখাটির জন্যই তাঁকে আটক করা হয়েছিল বলে মনে করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। একুশের অনুষ্ঠানে পুলিশের এ ধরনের তৎপরতায় বিস্ময় প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’ স্লোগান বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘কেন তারা (পুলিশ) এটা করল, তারাই ভালো বলতে পারবে। আমরা মনে করি, পুলিশ বিচার–বিবেচনাবোধ ছাড়াই, না বুঝে এমন একটা কাজ করে ফেলেছে। এটাকে পুলিশের বাড়াবাড়ি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমরা স্বাধীনভাবে আমরা মত প্রকাশ করে যাব।’

পুলিশের এমন কাণ্ডে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি সভাপতি এ বি সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ গণতন্ত্রে চলে না। এ ধরনের দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মনোভাব দেশের মানুষ পছন্দ করে না।’

ভাষা আন্দোলনকে বাঙালির চিরকালের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হালিম আজাদ বলেন, এই স্লোগান কেউ যদি মনে করে কারও বিরুদ্ধে গেছে, তাহলে গেছে। এখানে সংস্কৃতিকর্মীদের কিছু করার নেই। এখানে কেউ যদি বাধা বা আঘাত করার চেষ্টা করে, তাহলে তা হবে ২১ ও ভাষা আন্দোলনের প্রতি আক্রমণ করা।