‘ডিজিটাল নিরাপত্তার মামলায় আটক বা গ্রেপ্তারের এখতিয়ার র‌্যাবের আছে কি না’

‘ডিজিটাল নিরাপত্তার মামলায় আটক বা গ্রেপ্তারের এখতিয়ার র‌্যাবের আছে কি না’

নওগাঁয় আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে তিনটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে উচ্চ আদালত।

প্রথমত, সুলতানাকে আটকের সময় তার নামে কোনো মামলা ছিল কি না, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা অন্য কোনো মামলায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তারের এখতিয়ার র‌্যাবের আছে কি না এবং ২২ মার্চ সকালে সুলতানাকে উঠিয়ে নেয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত আসলে কী ঘটেছিল। মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট।

এ ছাড়া সুলতানার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন সুলতানা। র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২২ মার্চ) সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে আটক করা হয়। এরপর অসুস্থ হয়ে শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তবে, সুলতানা জেসমিনের স্বজনদের অভিযোগ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন তিনি। যদিও র‌্যাব দাবি করেছে, তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

মঙ্গলবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন র‌্যাব বাদে পুলিশের কোনো ইউনিটের মাধ্যমে ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সোমবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। ওই দিন হাইকোর্ট সুলতানার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তাকে র‌্যাবের কারা আটক করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের মধ্যে জানতে চায়।

এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে সুলতানার মৃত্যুজনিত কারণ সম্বলিত একটি মেডিকেল প্রতিবেদন আসে। যেখানে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সকালে শুনানিকালে হাইকোর্ট এ বিষয়ে দুপুর ২টার পর শুনানির জন্য ধার্য করে।

একই সঙ্গে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে রিট আবেদন করতে বলে আদালত।

শুনানিতে রিটকারী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এ ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। র‌্যাবের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল খুন, ডাকাতি, মাদক, জঙ্গিবাদের মতো বড় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে। কিন্তু এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার কথা বলা হচ্ছে। তাও মৃত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে।’

আইনজীবী এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘এই আইনে তদন্ত বা গ্রেপ্তার র‌্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যিনি মারা গেছেন তিনি একজন নারী। এটি খুব অন্যায় কাজ হয়েছে। এই যে বেআইনি কাজ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নেয়া মৃত্যুর মতো একটা ঘটনা সামগ্রিকভাবে এর জন্য বিচারিক তদন্ত জরুরি।’

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক সুলতানার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে র‌্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। কারও বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ থাকে তাহলে কি র‌্যাব তাকে ধরবে না? আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন।

সুলতানাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা হয়েছে- এমন অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, এ দাবি সঠিক নয়। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হন এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন। এ বিষয়ে হাইকোর্টকে আরো বিস্তারিত অবহিত করতে সময়ের আরজি জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

শুনানিকালে হাইকোর্ট বলে, ‘কোনো মানুষ যত জঘন্য অপরাধ করুক না কেন তাকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারে আইনি প্রক্রিয়া আছে। প্রতিটি নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার আছে। আমাদের উদ্বেগটা হলো র‌্যাবের একটা আলাদা পরিচিতি আছে। এখানে র‌্যাব উঠিয়ে নিয়ে গেছে। যাকে নেয়া হয়েছে তিনি একজন নারী। নিয়ম অনুযায়ী তারা পুলিশের সোপর্দ করবে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি সেটা করা হয়নি। পুরো দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, তাকে (সুলতানা) উঠিয়ে নেয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন, তিনি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন কি না, আসলে তখন কী ঘটেছিল।’

শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করে।